প্রথম বসন্ত

আজ  রবিবার ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা সফর, ১৪৪৭ হিজরি ,১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ 

আজ  রবিবার ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা সফর, ১৪৪৭ হিজরি ,১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ 

Click Here

সুন্দরবনের ১০ কিমির মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ নিষিদ্ধ

সুন্দরবন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এই বন তার অনন্য জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত গুরুত্বের জন্য পরিচিত। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনের চারপাশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রবণতা পরিবেশবিদ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সুন্দরবনের ১০ কিমির মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ নিষিদ্ধ

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে “প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা” (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে। এই ঘোষণার মাধ্যমে এই অঞ্চলে পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়। তবে, বিভিন্ন সময়ে এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৮৬টি শিল্প ও প্রকল্পকে পরিবেশের প্রাথমিক ও চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে

 আইনি পদক্ষেপ ও আদালতের নির্দেশনা

২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট একটি রায়ে সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন না করার নির্দেশ দেয়। এছাড়া, এই অঞ্চলে ইতিমধ্যে স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা ছয় মাসের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়

 বিদ্যমান শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও পরিবেশগত প্রভাব

পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান “লাল শ্রেণিভুক্ত”, যা মারাত্মকভাবে মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিমেন্ট কারখানা, গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদন, তেল পরিশোধন, ইটভাটা, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ইত্যাদি রয়েছে

 আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও ইউনেস্কোর ভূমিকা

সুন্দরবনের আশেপাশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কারণে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে ইউনেস্কোসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করে, এই ধরনের প্রকল্প সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

 পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ইসিএ

সুন্দরবনের ১০ কিমির মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ নিষিদ্ধবাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী, ইসিএ  ঘোষিত এলাকায় পরিবেশ দূষণকারী কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। তবে, বাস্তবে এই আইন প্রয়োগে নানা চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ইসিএ ঘোষণার আগে ছাড়পত্র পেয়েছে, যা বাতিল করা হয়নি। ফলে, এই অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

 পরিসংখ্যান ও তথ্য

ইসিএ ঘোষণার বছর: ১৯৯৯

সুন্দরবনের ১০ কিমির মধ্যে চিহ্নিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান: ১৯০টি

  • লাল শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান: ২৪টি

  • পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান: ১৮৬টি

 সুপারিশ ও করণীয়

  1. আইনের কঠোর প্রয়োগ: ইসিএ ঘোষিত এলাকায় নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা এবং বিদ্যমান অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নেওয়া।

  2. পরিবেশগত ছাড়পত্র পুনর্বিবেচনা: ইসিএ ঘোষণার আগে দেওয়া ছাড়পত্রগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

  3. সচেতনতা বৃদ্ধি: সুন্দরবনের গুরুত্ব ও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।

  4. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: ইউনেস্কোসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সুন্দরবন সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *