ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের বিক্ষোভ
ভূমিকা
বর্তমান সময়ে মানবতার সবচেয়ে বড় সংকটের নাম ফিলিস্তিন। গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বর্বরতা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে চলছে প্রতিবাদ। তারই অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের বিক্ষোভ ছিল এক শক্তিশালী আওয়াজ।
এই প্রতিবাদ শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং এটি ছিল মানবতা, ন্যায়বিচার এবং মুসলিম উম্মাহর একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভের চিত্র
১১ এপ্রিল ২০২৫ শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ঢাকা মহানগর কর্তৃক আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ও জোন থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা ব্যানার-ফেস্টুন ও স্লোগানে মুখর করে তোলেন গোটা এলাকা।
সমাবেশের বক্তারা কী বললেন
আইন সচিব অ্যাডভোকেট ইকবাল হাছান
তিনি তার বক্তব্যে বলেন,
“ফিলিস্তিনের গাজায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ইহুদিবাদীরা ইতিহাসের জঘন্যতম নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। নারী-শিশুসহ নিরীহ মুসলমানদের রক্তে ফিলিস্তিনকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হচ্ছে।”
তিনি আহ্বান জানান,
“এই বর্বরতা প্রতিহত করতে হলে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের মাধ্যমে জিহাদ শুরু করতে হবে।”
প্রফেসর ডা. এস. এম. সরওয়ার
তিনি বলেন,
“গাজার নিরীহ মুসলমানদের ওপর এ নিধনযজ্ঞ মানবতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অপরাধ। মুসলিম বিশ্বকে এখনই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।”
ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক
বক্তারা একযোগে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। বাংলাদেশসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে ইসরায়েলি কোম্পানির পণ্য যেমন:
-
Coca-Cola
-
Nestlé
-
McDonald’s
-
Puma
-
HP
-
Starbucks
এসব পণ্য বর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর ডাক দেওয়া হয়।
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের বিক্ষোভ
বিক্ষোভে ব্যবহৃত স্লোগানগুলো
সমাবেশে গণজমায়েত মুখরিত হয় শক্তিশালী স্লোগানে:
-
“লাখো শহীদের রক্তের ঋণ, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন”
-
“বিশ্ব মুসলিম এক হও, ফিলিস্তিন রক্ষা করো”
-
“ফিলিস্তিনে হামলা কেন? জবাব চাই”
-
“ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করো”
-
“আমরা সবাই গাজার পক্ষে, বর্বরতার বিরুদ্ধে”
সমাবেশের অন্যান্য বক্তা ও নেতৃবৃন্দ
-
কাজী শাহেদ আলম চৌধুরী
-
কাজী মোহাম্মদ তৈয়ব আলী
-
অ্যাডভোকেট লিংকন
-
বুলবুল আহমদ মোমেনশাহী
-
মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম (সঞ্চালক, সাধারণ সম্পাদক)
বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনে চলমান হত্যাযজ্ঞ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব মুসলিম সমাজ ক্ষুব্ধ। মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিক্ষোভ ও সমাবেশের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে লিখেছেন—
“এই সময় দাঁড়ানো উচিত মানবতার পক্ষে।”
“ইসরায়েলি পণ্য বর্জন এখন ঈমানি দায়িত্ব।”
ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বের করণীয়
১. ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে প্রতিবাদ করা
২. কূটনৈতিক চাপে ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি দাবি
৩. অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান
৪. ইসলামিক বিশ্বে মানবিক সাহায্য পাঠানো
৫. সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়ানো
সাংবাদিকদের ভূমিকা
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের বিক্ষোভ।
এই ধরণের প্রতিবাদ সভার তথ্য জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে সাংবাদিক ও মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের অপরাধ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা উচিত।
ধর্মীয় নেতাদের আহ্বান
সমাবেশে বক্তারা দেশের মসজিদের ইমাম, আলেম ও ইসলামিক স্কলারদের উদ্দেশ্যে বলেন—
“মিম্বার থেকে গাজার জন্য দোয়া, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং মুসলিমদের ঐক্যের আহ্বান জানাতে হবে।”
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের বিক্ষোভ শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি মানবতা রক্ষার আন্দোলনের একটি অংশ। বিশ্ব মুসলিমের দায়িত্ব এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে, যে যার অবস্থান থেকে এই গণহত্যা বন্ধে ভূমিকা রাখা।