জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ আবারও শুরু হয়েছে আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি। সাম্প্রতিক সময়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও, তা আশানুরূপ ফল দেয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী সংগঠন ও অংশগ্রহণকারীরা আবারও এনবিআরের সামনে কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই ঘটনায় তৈরি হয়েছে প্রশাসনিক অস্থিরতা ও রাজস্ব সংগ্রহে সম্ভাব্য বাধার আশঙ্কা।
উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, ফের অবস্থান কর্মসূচি এনবিআরে
গত কয়েক মাস ধরে এনবিআরের ভেতরে নানা বিষয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। বিশেষ করে কর আদায়, কর কর্মকর্তা বদলি, বেতন বৈষম্য এবং কর্মপরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে কর্মচারী ও কর্মকর্তারা একাধিকবার উচ্চপর্যায়ে আলোচনার দাবি জানান।
এই প্রেক্ষাপটে সরকারের উপদেষ্টারা এনবিআরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু আলোচনায় সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত বা প্রতিশ্রুতি না আসায় কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
কেন ফলপ্রসূ হয়নি আলোচনা?
উপদেষ্টারা একাধিক দফা বৈঠক করলেও মূল সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো রূপরেখা দেননি। কর্মকর্তারা যে বিষয়গুলো সামনে আনেন, সেগুলোর মধ্যে ছিল:
-
কর অঞ্চলভেদে বৈষম্যমূলক পদোন্নতি
-
নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া
-
বেতন কাঠামোতে অসঙ্গতি
-
কর্মপরিবেশে নিরাপত্তাহীনতা
-
অতিরিক্ত চাপ ও টার্গেট নির্ধারণ সংক্রান্ত আপত্তি
এই দাবিগুলোর কোনোটিরই সুস্পষ্ট সমাধান না আসায় আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং আন্দোলন আবারও জোরদার হয়।
অবস্থান কর্মসূচির প্রকৃতি
উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, ফের অবস্থান কর্মসূচি এনবিআরে। আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরপরই এনবিআর চত্বরে ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এই কর্মসূচির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
-
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান
-
ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন
-
দাবির প্রতি গণসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদান
-
কোনোরকম অফিসিয়াল ফাইল মুভমেন্ট বন্ধ রাখা
এই কর্মসূচির ফলে কর আদায়ের কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সূত্র।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারি পর্যায় থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। উপদেষ্টা পর্যায়ের আলোচনায় সিদ্ধান্ত আসেনি ঠিকই, তবে প্রশাসনিক পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে যারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, দাবি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
কর্মীদের বক্তব্য
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান:
“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরছি। কিন্তু বারবার আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। আমরা ফল চাই, আশ্বাস নয়।”
আরেকজন বলেন, “এই অবস্থান কর্মসূচি অনির্দিষ্টকাল চলবে, যতক্ষণ না আমাদের দাবি পূরণ হয়।”
আন্দোলনের প্রভাব
এই আন্দোলনের প্রভাব পড়ে রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থার ওপর। কর আদায়ের গতি হ্রাস পেয়েছে, করদাতাদের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আটকে আছে।
বিশেষ করে জুন মাসে যেখানে সরকারের রাজস্ব আদায়ের চূড়ান্ত সময়কাল, সেখানে এই ধরণের কর্মসূচি সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিনের বৈষম্য এবং বঞ্চনার ফলে কর্মীরা বাধ্য হয়েছেন কর্মসূচিতে নামতে।
তবে একটি অংশ বলছে, রাজস্ব আদায়ের সময় এরকম কর্মসূচি দেশীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্লেষকরা বলছেন, এনবিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে স্থিতিশীল রাখতে হলে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে কর্মপরিবেশ, সম্মানজনক বেতন কাঠামো, এবং পেশাদার স্বীকৃতি ছাড়া রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়।
অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. আব্দুল হাকিম বলেন,
“আমরা দেখেছি, এনবিআরের অব্যাহত রাজস্ব প্রবৃদ্ধির পেছনে কর্মকর্তাদের বড় অবদান আছে। তাদের দুঃখ-বেদনা উপেক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
করদাতাদের দুর্ভোগ
করদাতারা এনবিআরে গিয়ে সেবা না পেয়ে ফিরে আসছেন। অনেকে জানিয়েছেন, ফাইল আটকে থাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে রপ্তানি-আমদানিকারকেরা শুল্ক কার্যক্রমে বিলম্বের মুখে পড়েছেন।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
যদি দাবি দ্রুত মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। আন্দোলন আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দাবি পূরণে ইতিবাচক চিন্তা চলছে এবং দ্রুত সমাধান আশা করা যায়।
উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, ফের অবস্থান কর্মসূচি এনবিআরে । উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার ফলে এনবিআরে আবারও যে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে, তা জাতীয় রাজস্ব ব্যবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। সরকারের উচিত দ্রুত ও কার্যকর সমাধানে এগিয়ে আসা, যাতে প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং অর্থনৈতিক চাকা সচল থাকে।