২০২৫ সালের মে মাসে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা এই সিদ্ধান্তের পটভূমি, কারণ, প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা ট্রাম্পের
সিরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ১৯৭৯ সাল থেকে শুরু হয়, যা ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের পর আরও কঠোর হয়। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি সিরিয়ার অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
ট্রাম্পের ঘোষণা
২০২৫ সালের মে মাসে সৌদি আরবে এক সম্মেলনে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “তারা যথেষ্ট দুর্ভোগ সহ্য করেছে, এখন তাদের পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত” ।
সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব
বাশার আল-আসাদের পতনের পর, আহমেদ আল-শারা সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হন। তিনি অতীতে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে এখন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণ
সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা ট্রাম্পের
মানবিক পরিস্থিতি: সিরিয়ার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি এবং অবকাঠামোর ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা: সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
সন্ত্রাসবাদ দমন: সিরিয়ার নতুন সরকার আইএস এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
-
ইসরায়েল: ইসরায়েল এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ তারা শঙ্কিত যে সিরিয়া ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলিকে আশ্রয় দিতে পারে ।
-
জাতিসংঘ: জাতিসংঘ সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে স্বাগত জানিয়েছে, কারণ এটি মানবিক সহায়তা সহজতর করবে ।Reuters
সিরিয়ার প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ার জনগণ এবং সরকার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। দামেস্কের উমাইয়া স্কয়ারে জনগণ উদযাপন করেছে, এবং প্রেসিডেন্ট শারা বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য একটি নতুন সূচনা” ।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
-
অর্থনৈতিক পুনর্গঠন: নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে সিরিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতে পারে।
-
আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়ন: সিরিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
-
সন্ত্রাসবাদ দমন: যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়া যৌথভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় কাজ করতে পারে।
সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ
-
কংগ্রেসের অনুমোদন: কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন ।
-
মানবাধিকার উদ্বেগ: সিরিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের বিষয়।
-
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া: ইসরায়েল ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ট্রাম্পের ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি সিরিয়ার অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়ক হতে পারে।