মরক্কোতে এ বছর কোরবানি না দিতে সরকারি আদেশ জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি খরা, অর্থনৈতিক সংকট এবং পশুসম্পদের ঘাটতি। রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশের জনগণকে কোরবানির পরিবর্তে ঈদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
মরক্কোতে এ বছর কোরবানি না দিতে সরকারি আদেশ জারি
১. দীর্ঘমেয়াদি খরা ও পশুসম্পদের হ্রাস
২০১৬ সাল থেকে মরক্কোতে টানা সাত বছর খরা চলছে, যার ফলে পশুসম্পদের সংখ্যা ৩৮% হ্রাস পেয়েছে। বৃষ্টিপাত ৩০ বছরের গড়ের তুলনায় ৫৩% কম, যা চারণভূমি ও পশুখাদ্যের সংকট সৃষ্টি করেছে। ফলে পশুর দাম বেড়ে গেছে এবং অনেক কৃষক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
২. অর্থনৈতিক চাপ ও মূল্যস্ফীতি
মরক্কোতে এ বছর কোরবানি না দিতে সরকারি আদেশ জারি। খরা ও খাদ্য সংকটের কারণে পশুখাদ্যের দাম ৫০% বেড়েছে, যা নিম্নআয়ের পরিবারের জন্য কোরবানি দেওয়া কঠিন করে তুলেছে। রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ এই পরিস্থিতিতে কোরবানি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে জনগণের আর্থিক চাপ কমে এবং পশুসম্পদ সংরক্ষিত থাকে।
সরকারের পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া
১. পশুবাজার বন্ধ ও কোরবানি নিষিদ্ধ
সরকার দেশব্যাপী পশুবাজার বন্ধ করেছে এবং কোরবানির পশু বিক্রি ও জবাই নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া, কোরবানির সরঞ্জাম বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২. প্রতীকী কোরবানি ও ধর্মীয় দিকনির্দেশনা
রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি দেশের পক্ষ থেকে প্রতীকী কোরবানি করবেন, যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করে। ধর্মীয় নেতারা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন এবং জনগণকে ঈদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
১. কৃষক ও পশুপালকদের ক্ষতি
ঈদুল আজহা মরক্কোর পশু খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন কৃষক ও পশুপালকরা তাদের আয়ের একটি বড় অংশ অর্জন করেন। কোরবানি নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
২. জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
মরক্কোতে এ বছর কোরবানি না দিতে সরকারি আদেশ জারি। সরকারের সিদ্ধান্তে জনমত বিভক্ত হয়েছে। অনেকে এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় মনে করছেন, অন্যদিকে কিছু মানুষ ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও করণীয়
১. পশু খাতের পুনর্গঠন
সরকার পশু খাতের পুনর্গঠনের জন্য ৬.২ বিলিয়ন দিরহাম বরাদ্দ করেছে, যার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা, পশুস্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং প্রজনন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
২. আমদানি ও কর অব্যাহতি
মাংসের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার ২০২৫ সালের বাজেটে পশু ও লাল মাংসের আমদানিতে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর স্থগিত করেছে এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ১,০০,০০০ ভেড়া আমদানির চুক্তি করেছে।
মরক্কোতে এ বছর কোরবানি না দিতে সরকারি আদেশ জারি। মরক্কো সরকারের কোরবানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যা দেশের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঈদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।