বিতর্কিত ওয়াকফ বিল নিয়ে উত্তাল মুর্শিদাবাদ: সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জঙ্গিপুর মহকুমার সুতি ও সামশেরগঞ্জ এলাকায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে, পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ সময় একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে।
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪: মূল বিষয়বস্তু
কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৪ সালে ওয়াকফ আইন সংশোধনের জন্য একটি বিল পেশ করে। এই বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডের গঠন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়। বিলটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:
-
অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি: ওয়াকফ বোর্ডে দুইজন অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব।
-
নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তি: বোর্ডে দুইজন নারী সদস্য রাখার প্রস্তাব।
-
অডিট ও নিয়ন্ত্রণ: কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ বোর্ডের অডিট করতে পারবে এবং বোর্ডের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
-
ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের রায় চ্যালেঞ্জ: ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যাবে।
এই প্রস্তাবনাগুলোকে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, এটি তাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
বিলটি পেশ হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন বিরোধী দল এবং মুসলিম সংগঠন এর বিরোধিতা করে আসছে।
-
আসাদউদ্দিন ওয়েইসি: এআইএমআইএম নেতা ওয়েইসি সংসদে বলেন, “এই বিল সাংবিধানিক কাঠামোকে লঙ্ঘন করে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা পৃথকীকরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”
-
কংগ্রেস: কংগ্রেস এমপি কে সি বেনুগোপাল বলেন, “এই বিল সরাসরি ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর আঘাত। ওয়াকফ বোর্ডে কেন অ-মুসলিম সদস্য থাকবেন?”
-
সমাজবাদী পার্টি: নেতা অখিলেশ যাদব প্রশ্ন তোলেন, “কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বাইরের মানুষ কেন বোর্ডের সদস্য হবেন?”
-
তৃণমূল কংগ্রেস: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই বিল সম্পত্তি ধ্বংস করবে এবং এটি একটি অ-ফেডারেল বিল।”
মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ
মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
-
এসডিপিআই-এর বিক্ষোভ: সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই) মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজন করে। তারা ওয়াকফ বিলের প্রতীকী কপি পুড়িয়ে এবং মোদি ও অমিত শাহর কুশপুতুল দাহ করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে।
-
স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য: এসডিপিআই-এর রাজ্য সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক সুমন মন্ডল বলেন, “ওয়াকফ সংশোধনী বিল মুসলিমদের অধিকার হরণ এবং সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র।” রাজ্য সম্পাদক মাসুদুল ইসলাম বলেন, “এই বিল গণতন্ত্রের বিরোধী। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সরকারের এই ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না।”
আইনি ও সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি
বিরোধীরা দাবি করছে, এই বিলটি ভারতের সংবিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। তারা মনে করে, ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য ও সম্পত্তির উপর হস্তক্ষেপ।
বিতর্কিত ওয়াকফ বিল নিয়ে উত্তাল মুর্শিদাবাদ: সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ। ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪ ভারতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। মুর্শিদাবাদসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলছে। বিলটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সংসদীয় আলোচনার উপর, তবে এটি স্পষ্ট যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে।