প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর: গুরুত্ব পাবে দক্ষ কর্মী পাঠানো ও বিনিয়োগ

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর। বাংলাদেশের উন্নয়নের বর্তমান গতিপথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ধারাবাহিকতায় প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক জাপান সফর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সফরের মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো—দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি এবং জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ।

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর: গুরুত্ব পাবে দক্ষ কর্মী পাঠানো ও বিনিয়োগ

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর: গুরুত্ব পাবে দক্ষ কর্মী পাঠানো ও বিনিয়োগ। জাপান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ। অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে জাপানের অবদান চোখে পড়ার মতো। প্রধান উপদেষ্টার এই সফরটি ছিলো কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক—দুই দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকরা নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের সুযোগ পাচ্ছেন।

জাপানে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান সম্ভাবনা

১. জাপানের চাহিদা ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি

জাপানে বর্তমানে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আধিক্যের কারণে দক্ষ কর্মীর সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী সেই ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে নার্সিং, গার্ডেনিং, আইটি, কারিগরি, নির্মাণ, ইলেকট্রিক্যাল ও অটোমোবাইল খাতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সফরের সময় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

২. ভাষা ও প্রশিক্ষণ

জাপানে কাজ করার জন্য ‘জাপানিজ ল্যাংগুয়েজ প্রোফিশিয়েন্সি’ অত্যন্ত জরুরি। সফরে জাপানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তির খসড়া নিয়েও আলোচনা হয়, যেখানে বাংলাদেশে জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বিনিয়োগ আকর্ষণে আলোচনা

প্রধান উপদেষ্টা তার সফরে জাপানি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হন। তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ এবং দক্ষ শ্রমশক্তির প্রাপ্যতা তুলে ধরেন।

১. নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল

বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ করছে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একাধিক কর ছাড়, ১০০% মালিকানা, ও অবাধ মুনাফা প্রত্যাহার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

২. ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও লজিস্টিক সাপোর্ট

বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ নানা বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন জাপানি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেন যে, প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হবে।

দুই দেশের মধ্যে নতুন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর: গুরুত্ব পাবে দক্ষ কর্মী পাঠানো ও বিনিয়োগ। সফরের সময় বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

• বাংলাদেশ থেকে বছরে ২৫ হাজার দক্ষ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা

• ঢাকায় জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন

• জাপানি কোম্পানির বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ পরিকল্পনা

• বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি সহজীকরণের বিষয়ে আলোচনা

 রেমিট্যান্স বৃদ্ধি

এই সফরের ফলে জাপানে শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হলে রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড তৈরি হতে পারে।

 কর্মসংস্থানের সুযোগ

বিশেষ করে টেকনিক্যাল ও হেলথকেয়ার খাতে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

 জাপানি প্রযুক্তির স্থানান্তর

যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে, তারা তাদের প্রযুক্তিও আনবে—যা শিল্প খাতে বিপ্লব ঘটাবে।

 দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন

এই সফর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।

 চ্যালেঞ্জ

• ভাষা ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য

• দক্ষতা ঘাটতি

• তথ্যের অভাব

 করণীয়

• সরকারি পর্যায়ে নিয়মিত ভাষা প্রশিক্ষণ

• কারিগরি শিক্ষা বিস্তার

• প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর: গুরুত্ব পাবে দক্ষ কর্মী পাঠানো ও বিনিয়োগ। সফরের এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,

“বাংলাদেশের সক্ষমতা এখন বিশ্বদরবারে তুলে ধরার সময় এসেছে। জাপান আমাদের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু। আমরা চাই, দুই দেশের জনগণ যেন একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে।”

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর ছিল একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি আরও সুসংহত হবে এবং বহির্বিনিয়োগ আকর্ষণের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। এই সফর শুধু একটি রাষ্ট্রীয় সফর নয়, বরং বাংলাদেশের তরুণদের জন্য নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা এবং নতুন সম্ভাবনার বার্তা বহন করে।