
চাকসু নির্বাচন নিয়ে অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন
সময় ও স্থান
১৫ অক্টোবর ২০২৫, বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট, বুদ্ধিজীবী চত্বর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু প্রতীক্ষিত চাকসু নির্বাচন নিয়ে অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর চাকসু (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ ও প্রত্যাশা। কিন্তু নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রশাসনিক পক্ষপাত, অনিয়ম, এবং ভোট জালিয়াতির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
চাকসু নির্বাচন নিয়ে অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন
বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে “অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য” প্যানেলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনিয়ম, প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ত্রুটির কথা তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন,
“দীর্ঘদিন পর চাকসু নির্বাচন হওয়ায় আমরা ভেবেছিলাম ছাত্ররাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যহীন ও স্বচ্ছ মানসিকতার চর্চা শুরু হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন— নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ, ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম, ও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।”
বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে একাধিক কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা দেখা দিয়েছে।
অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের অভিযোগ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ভবনের ২১৪ নম্বর কক্ষে ২০টি স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বাক্সে প্রবেশ করানো হয়েছে। চ্যানেল ২৪ এবং আরটিভিতে বিষয়টি প্রচার হলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।
বিভিন্ন ভোটার জানিয়েছেন, প্রশাসনের দেওয়া অমোচনীয় কালি পানির সংস্পর্শে মুছে যাচ্ছে। অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য মনে করছে, এটি প্রশাসনের উদ্দেশ্যমূলক গাফিলতি, যা ভবিষ্যতে জাল ভোট কেলেঙ্কারির সুযোগ তৈরি করতে পারে।
ভোটকেন্দ্রের গোপন বুথে এক প্রার্থীর উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাপানো প্যানেল কপি রেখে আসার অভিযোগও উঠে আসে। অসংখ্য ভোটার এই অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ করলেও প্রিসাইডিং অফিসাররা কোনো পদক্ষেপ নেননি।
অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের প্যানেলভুক্ত প্রার্থী ইসমাইল ফাহিম অভিযোগ করেন, বিবিএ ফ্যাকাল্টি ভবনের ৩৩৫ নম্বর রুমে একজন ভোটারের আইডি ব্যবহার করে অন্যজন ভোট দেয়ার চেষ্টা করেছে। এছাড়া অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের স্বাক্ষর না নিয়েই ব্যালট পেপার প্রদান করা হয়েছে।
সব প্যানেলের জন্য অনুমোদিত পর্যবেক্ষক তালিকা প্রকাশ হলেও অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের পর্যবেক্ষকদের কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। সকালে প্রতিশ্রুতি দিলেও কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সেটি বাস্তবায়ন করেননি।
আইটি ভবনের ৩০৯ নম্বর রুমের সামনে টেবিলে একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের লিফলেট রাখা হয় এবং ভোট চলাকালীন সময়ে ভোটারদের প্রভাবিত করা হয়। এমনকি ভবনের সামনে নির্বাচনী ক্যাম্প বসানো হয়, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়।
অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের ভিপি প্রার্থী ফরহাদুল ইসলামের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অশোভন আচরণ নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন বিশেষ এক পক্ষের পক্ষে কাজ করছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছবিযুক্ত আইডি কার্ড যথাযথভাবে চেক না করায় বহিরাগতদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এরা নির্দিষ্ট প্যানেলের হয়ে কাজ করেছে এবং ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের নেতৃবৃন্দ বলেন —
“চাকসু কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, বরং এটি সব শিক্ষার্থীর গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন সব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”
তারা আরও বলেন, “বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ, প্রশাসনের গাফিলতি, এবং নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে এই নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যতা হারানোর পথে।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে আনন্দ ও আগ্রহ দেখা দেয়। তবে নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই কিছু কেন্দ্রের বাইরে উত্তেজনা, অনিয়মের অভিযোগ এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনও নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এর মধ্যে অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে প্রমাণসহ অভিযোগগুলো তুলে ধরে, যা এখন ক্যাম্পাসে আলোচনার কেন্দ্রে।
অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের এই সংবাদ সম্মেলন শুধু চাকসু নির্বাচনের অনিয়ম নয়, বরং শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান হিসেবেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তারা দাবি করেছেন —
“চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, প্রশাসনিক পক্ষপাত বন্ধ করতে হবে এবং সব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।”
