
“পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল নয়: ওযুর ১০টি গুরুত্ব ও হানাফি মাজহাবের মাসায়েল”
ইসলামে নামায হলো ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামায ছাড়া মুসলিম জীবন কল্পনাই করা যায় না। তবে একটি মৌলিক শর্ত রয়েছে—পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল হয় না। পবিত্রতা বা তাহারাতের মূল স্তম্ভ হলো ওযু। হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “ওযু ছাড়া নামায নেই।” (সহীহ মুসলিম)
আজকের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব:
-
নামাযে পবিত্রতার অপরিহার্যতা
-
ওযুর গুরুত্ব ও ফযীলত
-
ওযুর শর্তসমূহ
-
হানাফি মাজহাবের আলোকে অজুর মাসায়েল
-
ওযু নষ্ট হওয়ার কারণ
-
আধুনিক জীবনে পবিত্রতার শিক্ষা
পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল নয়: ওযুর গুরুত্ব
নামাযে পবিত্রতার গুরুত্ব
পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল নয়: ওযুর গুরুত্ব
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! যখন নামাযের জন্য দাঁড়াও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, মাথার উপর মাসাহ কর এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।” (সূরা মায়েদা: ৬)
➡️ এ আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে নামাযের পূর্বশর্ত হলো ওযু। ওযু ছাড়া নামায কখনোই কবুল হবে না।
হাদিসে ওযুর মর্যাদা
পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল নয়: ওযুর গুরুত্ব , রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
-
“পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক।” (সহীহ মুসলিম)
-
“যে ব্যক্তি ওযু করে, তার গুনাহ হাত-পা থেকে ঝরে পড়ে।” (সহীহ মুসলিম)
👉 অর্থাৎ ওযু কেবল নামাযের জন্য নয়, বরং আত্মার পবিত্রতারও একটি উপায়।
ওযুর গুরুত্ব
-
নামাযের শর্ত পূরণ হয়।
-
আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি আসে।
-
ছোটখাটো গুনাহ মাফ হয়।
-
মুসলিম পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করে।
-
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়।
ওযুর শর্তসমূহ (হানাফি মাজহাব)
হানাফি ফিকহে ওযু সহীহ হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে:
-
ইসলাম গ্রহণ করা।
-
আকলবান্দ হওয়া।
-
পাকপবিত্র পানি ব্যবহার করা।
-
শরীরে ওযুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যন্ত পানি পৌঁছানো।
-
ওযুর নিয়ত করা।
ওযুর ফরজ (হানাফি মাজহাব অনুযায়ী)
হানাফি মাজহাবে ওযুর ৪টি ফরজ আছে:
-
মুখমণ্ডল ধোয়া।
-
কনুই পর্যন্ত হাত ধোয়া।
-
মাথার চতুর্থাংশে মাসাহ করা।
-
টাখনু পর্যন্ত পা ধোয়া।
➡️ এগুলো না করলে ওযু সম্পূর্ণ হবে না।
ওযুর সুন্নাতসমূহ
-
বিসমিল্লাহ পড়া।
-
হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া।
-
মিসওয়াক করা।
-
নাক ও মুখে পানি দেওয়া।
-
প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়া।
ওযুর মুস্তাহাব
-
কিবলামুখী হয়ে বসা।
-
ডান দিক থেকে শুরু করা।
-
নিরবিচ্ছিন্নভাবে অঙ্গ ধোয়া।
-
পানি অপচয় না করা।
ওযু ভঙ্গ হওয়ার কারণ
হাদিস ও হানাফি ফিকহ অনুযায়ী:
-
প্রাকৃতিক রন্ধ্র থেকে কিছু নির্গত হওয়া।
-
নাক থেকে রক্ত বের হওয়া।
-
বমি হওয়া (এক মুখ ভরে)।
-
ঘুমিয়ে যাওয়া (বসা অবস্থায় ব্যতীত)।
-
হাসা (নামাযে উচ্চ স্বরে হাসলে)।
অজুর মাসায়েল (হানাফি মাজহাবের আলোকে)
-
নখের নিচে মোটা ময়লা থাকলে ওযু হবে না।
-
নখে নেইলপলিশ থাকলে পানি পৌঁছায় না, তাই ওযু সহীহ হবে না।
-
ইনজেকশন দিলে ওযু নষ্ট হয় না।
-
রক্ত বের হলে অল্প বা বেশি নির্ভর করবে রক্ত গড়িয়ে পড়ল কি না।
-
অজুর পর অযথা অঙ্গ শুকানো মাকরুহ।
নামাযে ওযুর গুরুত্বের দৃষ্টান্ত
পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল নয়: ওযুর গুরুত্ব, রাসূল ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করে, তারপর দুই রাকাত নামায পড়ে, আল্লাহ তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” (সহীহ বুখারী)
আধুনিক যুগে পবিত্রতার শিক্ষা
আজকের ব্যস্ত জীবনে পরিচ্ছন্নতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নামাযের আগে নিয়মিত ওযু করা আমাদের শেখায়—
-
স্বাস্থ্য সচেতনতা।
-
পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রক্ষা।
-
মানসিক প্রশান্তি।
-
শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন।
পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল নয়—এটি ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। ওযু শুধু শরীর ধোয়ার কাজ নয়, বরং আত্মাকে পবিত্র করার উপায়। একজন মুসলিমের জীবনে ওযু ও পবিত্রতা যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই জরুরি তার ঈমানের শক্তি বজায় রাখা।
সুতরাং, ওযু ছাড়া নামায নয়, আর নামায ছাড়া মুসলিম জীবন নয়।
