আহলে সুন্নাতের সংবাদ সম্মেলন: জশনে জুলুসে হামলা-ভাঙচুরের বিচার ও উগ্রবাদ দমনের দাবি
by Shamim Ara Begum
আহলে সুন্নাতের সংবাদ সম্মেলন: জশনে জুলুসে হামলা-ভাঙচুরের বিচার ও উগ্রবাদ দমনের দাবি
আহলে সুন্নাতের সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ
——-
জশনে জুলুসসহ শতাধিক মাযার-খানকাহ শরীফে হামলা, ভাঙচুর, লুঠতরাজ ও অগ্নিসংযোগের বিচার করতে হবে
——
ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার
মব সন্ত্রাস বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি
তৌহিদি জনতা – ঈমান সংরক্ষণ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের নাম ব্যবহার করে উগ্রবাদিরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে, তাদের লাগাম টেনে ধরুন
দেশব্যাপী পবিত্র জশনে জুলুছ-এ-ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.), বিভিন্ন স্থানে মসজিদ- মাযার শরীফে হামলা প্রসঙ্গে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের সংবাদ সম্মেলন আজ ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবস্থ এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীস আল্লামা কাজী মঈনুদ্দিন আশরাফি। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট মুখতার আহমদ ছিদ্দিকী। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত নির্বাহী চেয়ারম্যান আল্লামা আবুল কাশেম নুরী, মজলিসে শুরা সদস্য অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল ফারাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ আল্লামা হারুনুর রশিদ আশরাফী, অধ্যক্ষ আল্লামা রফিক উদ্দিন ছিদ্দিকী, অধ্যক্ষ এস এম ফরিদ উদ্দিন, অধ্যক্ষ আল্লামা ড. ইসমাইল নোমানী, আল্লামা নুর মুহাম্মদ আলকাদেরী, এম ইব্রাহিম আখতারী, আল্লামা ইউনুছ তৈয়বী যুক্তিবাদী, মাওলানা আব্দুন নবী কাদেরি, মুজিবুল হক শাকুর, পীরজাদা সৈয়দ এয়ার মোহাম্মদ পেয়ারু, মাওলানা ইকবাল হোসাইন আলকাদেরী, অধ্যক্ষ আবু ছালেহ, মাওলানা নুরুল্লাহ রায়হান খান, এম মহিউল আলম চৌধুরী, মাওলানা গিয়াস উদ্দিন নেজামী, এম মঈনুুদ্দিন চৌধুরী হালিম, মাওলানা এনাম রেজা, আলমগীর ইসলাম বঈদী, মিনহাজ উদ্দিন ছিদ্দিকী, মুহাম্মদ এনামুল হক, মুহাম্মদ নুর রায়হান চৌধুরী প্রমূখ। আল্লামা কাজী মঈনুদ্দিন আশরাফি বলেন -দেশের কাঙ্খিত পরিবর্তন আমরা সকলের একান্ত কাম্য। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দেশব্যাপী পীর-আউলিয়া কেরামের মাযার শরীফ সমূহে কথিত তৌহিদি জনতা, ঈমান সংরক্ষণ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের নাম ব্যবহার করে উগ্রবাদীদের ঘৃণ্য হামলা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুফীবাদি সুন্নী মুসলমানদের চরমভাবে আশাহত করেছে। এ যাবৎ শতাধিক মাযারে হামলা, লুটপাট, অগ্নি সংযোগের মত জঘন্য ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হলেও এক্ষেত্রে দোষীদের চিহ্নিত করে প্রচলিত আইনে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত দেশব্যাপী এ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটনা আশংকাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে। অতি সম্প্রতি রাজশাহীতে দরবার -খানকায় হামলা এবং রাজবাড়ীতে নুরু পাগলার মৃত্যুর প্রায় পঁচিশদিন পর কবর থেকে লাশ তোলে দিন দুপুরে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ চরমভাবে আশাহত হয়েছে। অথচ ইসলামী শরীয়তে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি প্রদানের অধিকার একমাত্র আগুনের স্রষ্টা মহান আল্লাহর (বুখারী শরীফ)। বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে কোন কাফির- বেঈমানকেও আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়া নিষেধ করা হয়েছে। কথিত তৌহিদি জনতার আলেমদের পক্ষ থেকে, এমনকি মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টার পক্ষ হতেও এঘটনাগুলোর বিষয়ে কোন বক্তব্য- মন্তব্য এবং কার্যকর পদক্ষেপ না আসা খুবই উদ্বেগের বিষয়। তিনি ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) বিষয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের খতিব মৌলভি আব্দুল মালেকের বক্তব্যকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে বলেন – তার বিতর্কিত বক্তব্য পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করেছে। তিনি আরো বলেন- ঈদে মিলাদুন্নবী রাষ্ট্রীয় দিবস হিসেবে সারাদেশে পালিত হচ্ছে। তিনি নিজেও চাঁদদেখা কমিটির সদস্য হিসেবে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)’র তারিখ নির্ধারণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জাতীয় মসজিদের খতিব উপস্থিত ছিলেন।এ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে প্রধান উপদেষ্টার বাণীও প্রচারিত হয়েছে।
দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অবস্থায় জাতীয় মসজিদের খতিব কর্তৃক পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি ও একটি রাষ্ট্রীয় দিবসের বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি প্রকারান্তরে রাষ্ট্রদোহিতার দোষে অপরাধী এবং জাতীয় মসজিদের খতিবের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।তিনি আরো বলেন আমরা মনে করছি- এ ধরনের কিছু ব্যক্তির কপর্দকহীন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেশকে অরাজক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আহলে সুন্নাতের নির্বাহী চেয়ারম্যান আল্লামা আবুল কাশেম নূরী বলেন- ১২ই রবিউল আউয়াল বিশ্বের সর্ববৃহৎ জশনে জুলুছের আয়োজন হয় চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ নবীপ্রেমিক সুন্নী মুসলমান গাড়ী বহর নিয়ে সর্ববৃহৎ এ ধর্মীয় প্রোগ্রামে ভাব-গম্ভীর পরিবেশে ও শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করে। অতীব দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উত্তর চট্টগ্রাম থেকে আসা গাড়িগুলোতে জশনে জুলুছে অংশগ্রহণকারীদের উপর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে গরম পানি নিক্ষেপ করার মত ঘটনা ঘটে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে জশনে জুলুছে অংশগ্রহণকারীদের একজন আঙ্গুল প্রদর্শন করে। যাকে উপলক্ষ করে উক্ত হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রগণ রাস্তায় বেরিয়ে অনেক যানবাহন ভাংচুর করে। তবে,তারা জুলুসের একদিন পূর্বে উক্ত মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম দিয়ে তৈরিকৃত প্যাডে জশনে জুলুসে অংশ নেয়া মুসল্লিদের প্রতিরোধ করাসহ বিশৃঙ্খলা তৈরির ঘোষণা দেয়। পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী তারা জুলুসের গাড়িগুলোতে হামলা চালায়। মাদ্রাসা থেকে গরম পানি নিক্ষেপ করে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আঙ্গুল প্রদর্শনকারীকে দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করা হয়। অপরদিকে বিনা উষ্কানিতে গরম পানি নিক্ষেপকারীর ব্যাপারে কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা একান্ত কামনা করেন। আহলে সুন্নাত নেতৃবৃন্দ বিগত এক বছরে দেশব্যাপী কথিত তৌহিদি জনতা, ঈমান সংরক্ষণ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের নামে মাইকে ঘোষণা দিয়ে শত বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ শতাধিক মাযার ধ্বংস করে দেয়া, মব সৃষ্টি করে আহলে সুন্নাত কর্মী ইমাম রইসউদ্দিন হত্যাসহ বিভিন্ন সুফীবাদী ব্যক্তিকে হত্যা, মাযারের খাদেম হত্যার বিচারসহ সারাদেশে উগ্রবাদীদের হামলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রদান, শাস্তি নিশ্চিতকরণ, ধ্বংস্তুপে পরিণত করা সমস্ত মাযার খানকাহ পুর্ননির্মাণ সহ ধ্বংসযজ্ঞের সকল ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন, ব্রাহ্মনবাড়ীয়ায় নবী প্রেমিক সুন্নী মুসলমানদের “জশনে জুলুছে” বন্ধ করতে লাঠি-সোটা নিয়ে অবস্থান নেয়া উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রতিটি নারকীয় ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক কার্যকর, আইনী পদক্ষেপের জোর দাবি এবং হাটহাজারীর ঘটনায় গ্রেফতারপূর্বক ব্যক্তির নিঃশর্ত মুক্তিও দাবি করেছেন।