বর্তমান বিশ্ব এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং সম্পদের অসম বণ্টন আমাদের সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার, যা পৃথিবীকে রক্ষার একটি কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পৃথিবীকে রক্ষায় ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
থ্রি জিরো থিওরি: তিন শূন্য তত্ত্ব
ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো থিওরি’ বা তিন শূন্য তত্ত্ব তিনটি মৌলিক লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিতশূন্য দারিদ্র্য: সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ।
-
শূন্য বেকারত্ব: উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস।
-
শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ: পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও অভ্যাসের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানো।
এই তত্ত্বের মাধ্যমে একটি টেকসই ও মানবিক বিশ্ব গঠনের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
থ্রি জিরো ক্লাব: একটি সামাজিক আন্দোলন
পৃথিবীকে রক্ষায় ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার। ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ হলো পাঁচজন ব্যক্তি নিয়ে গঠিত একটি দল, যারা তিন শূন্য তত্ত্ব বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ক্লাবের সদস্যরা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করেন এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করেন।
তরুণদের ভূমিকা
ড. ইউনূস তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সৃজনশীল হয়ে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার। তিনি বলেন, “চাকরি মানুষের সৃজনশীলতাকে দমন করে।” তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব অপরিসীম।
সামাজিক ব্যবসা: টেকসই উন্নয়নের পথ
সামাজিক ব্যবসা এমন একটি মডেল, যেখানে মুনাফা নয়, বরং সামাজিক সমস্যার সমাধানই মূল লক্ষ্য। এই মডেলের মাধ্যমে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।
থ্রি জিরো ক্লাব গঠনের ধাপসমূহ
-
সদস্য সংগ্রহ: পাঁচজন সমমনা ব্যক্তি নিয়ে ক্লাব গঠন।
-
লক্ষ্য নির্ধারণ: তিন শূন্য তত্ত্ব বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন।
-
কার্যক্রম পরিচালনা: সামাজিক ব্যবসা, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা।
-
মূল্যায়ন ও সম্প্রসারণ: ক্লাবের কার্যক্রম মূল্যায়ন এবং অন্যান্য ক্লাব গঠনে সহায়তা।
থ্রি জিরো ক্লাবের সাফল্যের উদাহরণ
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থ্রি জিরো ক্লাব গঠনের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, বেকারত্ব কমানো এবং পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এই ক্লাবগুলোর মাধ্যমে তরুণরা সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করছেন
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
চ্যালেঞ্জ:
-
সচেতনতার অভাব
-
আর্থিক সহায়তার সীমাবদ্ধতা
-
প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব
সমাধান:
-
সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি
-
সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা বৃদ্ধি
-
প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান
পৃথিবীকে রক্ষায় ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার। ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ একটি সামাজিক আন্দোলন, যা তরুণদের সৃজনশীলতা ও উদ্যোক্তা মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে একটি টেকসই ও মানবিক বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ড. ইউনূসের এই উদ্যোগ আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে পৃথিবীকে রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে।