বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার্থীরা আবারও রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। “ফের মাঠে নামছেন কারিগরির শিক্ষার্থীরা”—এই বার্তা যেন দেশের শিক্ষানীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। রোববার (১৮ মে) ঢাকার বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। এছাড়া দেশের অন্যান্য কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একইভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
ফের মাঠে নামছেন কারিগরির শিক্ষার্থীরা, রোববার বিক্ষোভের ডাক
হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবি
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের মূল দাবি হলো, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতি সংক্রান্ত একটি রিট মামলার রায় বাতিল করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, এই রায়ের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় অদক্ষতার সুযোগ তৈরি হবে।
নিয়োগবিধি সংস্কারের দাবি
২০২১ সালের নিয়োগবিধিকে শিক্ষার্থীরা বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করছেন। তাদের দাবি, এটি বাতিল করে নতুন, স্বচ্ছ ও ন্যায্য বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
ছয় দফা দাবি
১. হাইকোর্টের রায় বাতিল করে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতি ও পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সঙ্গে জড়িতদের চাকরিচ্যুত করা।
২. বিতর্কিত নিয়োগবিধি বাতিল ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স অব্যাহত রাখা এবং বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম চালু করা।
৪. ১০ম গ্রেডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণ।
৫. বেসরকারি খাতে ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলীদের ন্যূনতম বেতন ১৬০০০ টাকা নির্ধারণ।
৬. জুনিয়র ও ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদবি ও বেতন বৈষম্য দূরীকরণ।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি জোবায়ের পাটোয়ারী সংবাদ সম্মেলনে বলেন—
“আমাদের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। আদালতে যে রায় রয়েছে, তা স্থগিত করা হলেও এখনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। রোববার এ বিষয়ে শুনানি রয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের অবস্থান জানাবো।”
পূর্ববর্তী আন্দোলনের ইতিহাস
কারিগরি শিক্ষার্থীরা গত এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছেন। তারা কখনো সড়ক অবরোধ, কখনো রেলপথ বন্ধ করে দিয়েছে। ‘কাফনের কাপড় পরে’ আন্দোলন, মশাল মিছিল—সবই ছিল আন্দোলনের অংশ। তবে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা আবারও মাঠে নামছেন।
সরকারের অবস্থান
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে ইতিমধ্যে পদবি পরিবর্তন ও নিয়োগ বিধি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হলেও শিক্ষার্থীরা তা যথেষ্ট মনে করছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কার্যকর রূপরেখা প্রকাশ করা হয়নি।
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দাবি আদায় না হলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতে জাতীয় প্রেসক্লাব ঘেরাও, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা এবং গণঅনশন কর্মসূচিরও হুমকি দিয়েছেন তারা।
মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া
জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে আন্দোলনের খবর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমেও ছাত্রদের আন্দোলন ঘিরে জনমত তৈরি হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের প্রতি বার্তা
কারিগরি শিক্ষার্থীরা যেনো তাদের দাবিগুলো নির্যাতন ও সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে আদায় করে নিতে পারেন, সেদিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া জরুরি। সরকার, আদালত ও প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে একটি স্থায়ী সমাধান দিতে হবে।