
বিনিময় হারে নমনীয় হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
জুনে আইএমএফের ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) আগামী জুন মাসে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ মঞ্জুর করতে সম্মত হয়েছে। এই ঋণ প্যাকেজটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
আইএমএফ ঋণ: পটভূমি ও বর্তমান অবস্থা
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায়, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে তিনটি কিস্তিতে ২.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। বাকি ২.৪ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্য নির্ধারিত শর্তাবলী পূরণ করা প্রয়োজন ছিল।
ঋণ মঞ্জুরির শর্তাবলী ও পূরণ
জুনে আইএমএফের ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ।আইএমএফের ঋণ পেতে বাংলাদেশকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হয়েছে:
-
বিনিময় হার নীতিতে নমনীয়তা: বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ‘ক্রলিং পেগ’ সিস্টেম চালু করেছে, যেখানে ডলারের বিনিময় হার ২.৫% পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। এই সীমা বাড়িয়ে ৪-৫% করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
-
রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কার: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করা হয়েছে, যা কর নীতি ও প্রশাসনকে পৃথকভাবে পরিচালনা করবে। এই পদক্ষেপটি আইএমএফের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল।
ঋণ মঞ্জুরির প্রক্রিয়া ও সময়সূচি
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এই পর্যালোচনার ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায়, আইএমএফ আগামী জুন মাসে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
এই ঋণ প্যাকেজের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিম্নলিখিত সুবিধা পেতে পারে:
-
মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা: ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, যা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
-
বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আস্থা বৃদ্ধি পাবে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে।
-
অর্থনৈতিক সংস্কার ত্বরান্বিত: কর প্রশাসন ও বিনিময় হার নীতিতে সংস্কার কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
চ্যালেঞ্জ ও সতর্কতা
জুনে আইএমএফের ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
যদিও এই ঋণ অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক, তবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
-
ঋণ পরিশোধের চাপ: ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রয়োজন।
-
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: বিনিময় হার পরিবর্তনের ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, যা মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
-
রাজস্ব সংগ্রহের দক্ষতা: নতুন কর প্রশাসন কাঠামোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
আইএমএফের ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুরি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই ঋণ প্যাকেজের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বিনিয়োগ আকর্ষণ, এবং কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তবে, ঋণের যথাযথ ব্যবহার এবং শর্তাবলী পূরণ নিশ্চিত করতে সরকারকে সচেষ্ট থাকতে হবে।