🚨 আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি প্রয়োজন: ‘মব জাস্টিস’ উদ্বেগজনক 🚨

আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি প্রয়োজন ‘মব জাস্টিস’ উদ্বেগজনক

মুহাম্মদ ফজলুল করিম তালুকদার

অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় সাত মাস ধরে দেশ পরিচালনা করছে। একটি অগ্নিগর্ভ বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম তথা দেশের বরেণ্য কীর্তি সন্তান আন্তর্জাতিক নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলেও নানান কায়দায় যেন সরকারের ঘুম হারাম করে ফেলতে ব্যস্ত একটি বিশেষ মহল। দেশে ১৫-১৬ বছর কোন গণতন্ত্র ছিলনা। গণতন্ত্র ও সুশাসন না থাকায় একজন সর্বেসর্বা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামতো যেমন খুশি তেমনভাবে দেশ পরিচালিত হয়েছে। ফলে সরকারের ওপর দেশবাসী ক্ষিপ্ত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও প্রতিকারের পথও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ড. ইউনূসের সরকার গঠিত হবার পর থেকেই নানা সংগঠন-সংস্থা,নানা মহল নানা গোষ্ঠী একের পর এক দাবি জানানোর জন্য রাজধানী ঢাকায় নৈরাজ্যপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করেছে। প্রথম দিকে সরকার একটু নমনীয় হলেও এখন আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে লাঠিপেটা ও জলকামান নিক্ষেপ করে আন্দোলন বাগে আনার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ইউনূসের সরকার।তবে যেহেতু এখন নির্বাচিত সরকার নেই,তাই সবাই মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছে।এখনকার সময়কে দাবি আদায়ের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছে আন্দোলনকারী মহলগুলো। নানা দাবিতে আন্দোলন এতটাই তুঙ্গে উঠেছিল যে সরকারকে পুলিশ দিয়ে বল প্রয়োগ করতেও হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুশাসন ও জনতুষ্টি নিয়ে সরকারকে দেশ পরিচালনা করতে হয়।তবুও পুলিশি দমন-নিপীড়ন জনগণ ভালোভাবে দেখেন না। পুলিশ যেন স্বৈরাচারী মনোভাব পাল্টাতে পারে না। পুলিশকে কেন এখনো লাঠিপেটা ও জলকামান ছুড়ে আন্দোলন দমানোর পথ বেছে নিতে হয় তা আমাদের বুঝে আসে না। জনবান্ধব পুলিশের প্রত্যাশা আমরা কবে বাস্তবে দেখতে পাবো। পুলিশ কেন একজন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, বয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর চড়াও হবেন। এই ফ্রিল্যান্স বাড়াবাড়ির দায়িত্ব ও নির্দেশনা তারা কার থেকে কিভাবে পায়! অন্যদিকে ঠুনকো অজুহাত দাঁড় করিয়ে মিথ্যা মনগড়া গুজব ছড়িয়ে দেশের নানা স্থানে বেশ কয়েকজনকে এই সাত মাসে খুন ও নিপীড়নের নানা দুঃখজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গড়ন ঔঁংঃরপব বা আইন হাতে তুলে নেয়া জঘন্য ফৌজদারী অপরাধ। গড়ন ঔঁংঃরপব হলো উত্তাল জনতা আইন শৃঙ্খলা হাতে তুলে নিয়ে কাউকে মারধর করা,নির্যাতন করা এমনকি মেরে ফেলা। এটা উশৃঙ্খল জনতার বেআইনি পদক্ষেপ। এ শাস্তি প্রায়শই মারধর,নির্যাতন বা হত্যা পর্যন্ত হতে পারে। বিদ্যমান আইন ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার ফলে মানুষ অনেক সময় আইন হাতে তুলে নেয়। এটাই হলো ‘মব জাস্টিস’। কারণ বা অকারণ যাইহোক ‘মব জাস্টিস’ জঘন্য অপরাধ। অন্যদিকে দেশে এখন ধর্ষণ খুন-খারাবি অপহরণ গুম খুব বেড়ে গেছে। পিতা কন্যাকে ধর্ষণ করছে। মাগুরায় বোনের বাড়িতে গিয়ে শিশু আছিয়া পৈশাচিক ঘৃণ্য ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সীতাকুণ্ডে ৭০ বছরের বৃদ্ধ ১০ বছরের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করেছে। এভাবে প্রতিদিন পত্রিকা দেখলে ও টিভি খুললে ধর্ষণ, খুন অপহরণের নানা ভয়াবহ ঘটনার দৃশ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। আশার কথা যে,সরকার ধর্ষণের শাস্তি ৩ মাসের মধ্যে শেষ করতে চায়। ধর্ষণকারীদের জন্য অজামিনযোগ্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এ সরকার। তা অবশ্যই সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। ধর্ষণ খুন অশ্লীলতা এমন মহিমান্বিত ফজিলতপূর্ণ মাসে কেন বেড়ে গেল এর রহস্য ও কারণ উন্মোচন করতে হবে। ৩ মাস নয় বরং ২ মাস বা ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ষণের হত্যার যে বিচারের দাবি এখন উঠেছে তা সরকারকে আমলে আনতে হবে। কোনো আইনি দুর্বলতা ও আইনের ফাঁক ফোঁকরে যাতে ধর্ষকরা বেরিয়ে যেতে না পারে,আইনকে সেভাবে কঠিন,বাস্তবানুগ ও যুগোপযোগী করে তুলতে পারলে আশা করা যায় প্রত্যাশিত সুফল মিলবে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণঘৃণাবোধ জাগ্রত করতে হবে। কেবল মাদ্রাসায় নয়,সকল পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক দ্বীনি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে শিক্ষার্থীদেরকে মানবিক,নৈতিক ও সুন্দর মানুষরূপে গড়ার উদ্যোগ নিতে হবে। এর বিকল্প আর কিছুই ভাবা যায় না।