ধর্ষণের বিচারের দাবিতে উত্তাল দেশের শিক্ষাঙ্গন
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষাঙ্গন উত্তাল হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা দোষীদের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করছেন। এই আন্দোলনগুলোতে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণবিরোধী স্লোগান, প্ল্যাকার্ড ও মশাল মিছিলের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ প্রকাশ করছেন।
ধর্ষণের বিচারের দাবিতে উত্তাল দেশের শিক্ষাঙ্গন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন। ইংরেজি, লোকপ্রশাসন, বাংলা, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। তারা মুখে লাল কাপড় বেঁধে ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করেন এবং ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’, ‘হ্যাং দ্য রেপিস্ট, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শনিবার (৮ মার্চ) দিবাগত রাতে কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন। তাদের সঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। মিছিলটি হল পাড়া থেকে শুরু হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে আলটিমেটাম দেন এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাগুরায় সাত বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান ফটক-সংলগ্ন খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে এক ঘণ্টা অবস্থান করে। তারা ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল করেন। রোববার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরোপয়েন্ট থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি কাটাপাহাড় সড়ক, শহীদ মিনার, প্রীতিলতা হল প্রদক্ষিণ করে দক্ষিণ ক্যাম্পাস হয়ে প্রধান ফটকে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে, আমি কে- আছিয়া আছিয়া’, ‘ধর্ষকদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান:
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ধর্ষণ প্রতিরোধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শর্মি হোসেন ও নোভা আহমেদ এতে নেতৃত্ব দেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বাংলাদেশ ও ধর্ষণের বিচার এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের দাবি:
শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দোষীদের দ্রুত ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। এছাড়া, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি করেন তারা।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। অনেকেই #ধর্ষণবিরোধী_আন্দোলন, #নারীর_নিরাপত্তা, #ধর্ষকদের_ফাঁসি ইত্যাদি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তাদের সমর্থন ও মতামত প্রকাশ করছেন। সাধারণ জনগণও শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।