
রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৮ শতাংশে আনার আশা অর্থ উপদেষ্টার
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা, রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার নিয়ন্ত্রিত বাজারনীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৮ শতাংশে আনার আশা অর্থ উপদেষ্টার

বর্তমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি
বর্তমানে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই মূল্যস্ফীতি উচ্চমাত্রায় রয়েছে। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯% থেকে ১০%-এর মধ্যে অবস্থান করছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সরকারের পরিকল্পনা
সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু কার্যকর নীতি গ্রহণ করেছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আমরা লক্ষ্য রাখছি, রমজানের পর ধাপে ধাপে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৮ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হবে।” এর জন্য নিচের কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করা হবে:
১. বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা
✅ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, চিনি ও পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
✅ ব্যবসায়ীদের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের তদারকি বৃদ্ধি করা হবে।
২. বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা রক্ষা
✅ ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
✅ আমদানি খরচ কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের উপর শুল্কহ্রাসের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
৩. আমদানি নির্ভরতা কমানো ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি
✅ সরকার দেশীয় কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে, যাতে আমদানি নির্ভরতা কমে এবং দেশীয় উৎপাদিত পণ্য বেশি ব্যবহৃত হয়।
✅ কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে অতিরিক্ত ভর্তুকি ও প্রণোদনা দেওয়া হবে।
৪. মনিটরি পলিসি ও সুদের হার নিয়ন্ত্রণ
✅ বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজারে অর্থ সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়।
✅ আমানত ও ঋণের সুদের হার পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে, যাতে মুদ্রাস্ফীতি কমে ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা কতটুকু?
বিশ্লেষকদের মতে, রমজানে সাধারণত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু রমজানের পর এই চাহিদা কিছুটা কমে যায়, ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ হ্রাস পেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর বাজার নিয়ন্ত্রণ নীতি ও মনিটরিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমরা চাই বাজার স্থিতিশীল হোক, সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বজায় থাকুক এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হোক।”
বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চিত্র
মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল হবে। এতে:
✅ খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।
✅ ব্যাংকিং খাতের সুদের হার ও ঋণপ্রবাহ উন্নত হবে।
✅ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত হবে।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা দরকার। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ও আমদানি ব্যয় কমানো গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, সরকারের কার্যকর নীতিমালা এবং বাজার ব্যবস্থাপনা এই সংকট মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
রোজার পর সরকারের লক্ষ্য ৭-৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি অর্জন করা, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হয় এবং সাধারণ মানুষের উপর এর কী প্রভাব পড়ে।