
নিত্যপণ্যের দাম কমানো, সংস্কার ও
নির্বাচন এই তিনটি বিষয়ে চাই অগ্রাধিকার
মুহাম্মদ ফজলুল করিম তালুকদার
এমনিতে দেশের গরিব মানুষেরা ভালো নেই। তারা দুই বেলা পেট পুরে খেতে পারে না। নুন আনতে পান্তা ফোরায় দশা সাধারণ মানুষের। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ধকল সইতে হচ্ছে দেশের নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষগুলোকে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেট তৈরি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোতে সচেষ্ট এই অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে কোটি ভোক্তা সাধারণ আজ অশেষ দুর্ভোগ সয়ে দিনযাপন করছে। গরিবের সাধারণ চালের দামও আজ ৬৫/৭০ টাকা। দেশে চালের উৎপাদন বাড়ছে। এখন নতুন চালও বাজারে উঠেছে। চালের সরবরাহেও তেমন ঘাটতি নেই। তবুও কেন অকারণে হু হু করে চালের দাম বাড়ছে তা আমজনতা বুঝতে পারছে না। সাধারণ মানুষের জীবন আজ চিড়েচ্যাপ্টা। চালের দাম যে হারে দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আগামী এক বছরের মধ্যে প্রতি কেজি চালের দাম উঠবে অন্তত ১০০ টাকা। তখন গরিবদের কি অবস্থা দাঁড়াবে তা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর মানুষের অগাধ ভক্তি বিশ্বাস সমর্থন ও আনুগত্য আছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ চট্টগ্রাম তথা দেশের কৃতী সন্তান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের গভীর রাজনৈতিক সংকটকালে দেশের হাল ধরেছেন। তাই সঙ্গত কারণেই তাঁর ওপর এবং তাঁর সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা। দেশবাসী মনে করেছিল, পতিত সরকারের রেখে যাওয়া রীতি-নীতি পাল্টে গিয়ে দেশে সব ক্ষেত্রে সুবাতাস বইবে। বাজারের অস্থিরতা কমবে। কিন্তু কৈ, কোথাও বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। কেবল চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেটের হাত বদল হচ্ছে। সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ সব নিত্য পণ্যের উচ্চ মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সাফল্য পাচ্ছে তা নির্দ্বিধায় বলা যাচ্ছে না। কোথায় যেন গলদ রয়ে গেছে। সরকার বদল হয়েছে। জনগণ সমর্থিত সরকার এখন দেশ চালাচ্ছে। অথচ এখনো পতিত সরকারের দোসররা সবখানে কলকাঠি নাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। পদে পদে বাধা বিপত্তি এবং বিভিন্ন মহলের নানা দাবি দাওয়ার কারণে দেশে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যদিকে গত ৯ জানুয়ারি হঠাৎ করে দেশে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর সরকার শুল্ককর বৃদ্ধি করায় জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এতে করে দেশে ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছে। শতাধিক পণ্য-সেবায় উচ্চ শুল্ককর বৃদ্ধি ব্যবসায় মন্দা ভাব নেমে আসবেÑসন্দেহ নেই।
আমরা মনে করি এখন অন্তত তিনটি বিষয়ে সরকারকে বিশেষভাবে দেখভাল করতে হবে। নিত্যপণ্য তথা ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কার, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার, নির্বাচন কমিশনে আমূল পরিবর্তন আনা এবং সংবিধান সংস্কারসহ নানা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে। সংস্কার হতে হবে অবশ্যই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে। তাড়াহুড়া করে সংস্কার করতে গিয়ে ত্রুটিপূর্ণ সংস্কারও করা যাবে না। আমরা প্রত্যাশিত সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। বিএনপিসহ ছোট বড় রাজনৈতিক দলগুলো চলতি ২০২৫ সনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই সময়ে পরিপূর্ণ সংস্কার হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে। তাই ২০২৫ সনের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার পক্ষে দেশে জনমত তৈরি করা দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশে নির্বাচিত সরকার থাকলে দেশবাসী স্বস্তিবোধ করবে। তখন নানা দেশ আমাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
যেনতেন প্রকারে জাতীয় নির্বাচন আমরা চাই না। দেশবাসী তা মানবেও না। এমন একটা জাতীয় নির্বাচন চাই, যার মাধ্যমে জনমত প্রতিফলিত হবে, জনরায়ে জনগণের সরকার গঠিত হোক তাই আমরা দেখতে চাই। নির্বাচন ব্যবস্থা এমন টেকসই, বাস্তবসম্মত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। যেন নির্বাচনের পর কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে। সবাই যেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সেই নিশ্চয়তা চাই সরকারের কাছে। নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি যেন না হয়, অসাধু কালো টাকার মালিকরা যেন জনপ্রতিনিধি বা এমপি হতে না পারে সেই পথ বন্ধ করে দিতে হবে সরকারকে। নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি আমাদের দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় অন্তরায়।
শত কোটি টাকার বাজেট নিয়ে কালো টাকা ছড়িয়ে এখানে এমপি হওয়া যায়। তাদেরকে কেউ ছুঁতে পারে না। আইন করে নির্বাচন কমিশনকে দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদের নির্বাচনে আসার পথ রুদ্ধ করে দিতে হবে। টাকার জোরে নয় বরং যোগ্যতার জোরে এমপি বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথ তৈরি করে দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এজন্য দরকার অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার করার মাধ্যমে ২০২৫ সনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবিশেষ দাবি জানাই। আশা করি, তাঁরা দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নেবেন।
লেখক: ব্যাংকার, প্রকাশক: প্রথম বসন্ত।
আমরা মনে করি এখন অন্তত তিনটি বিষয়ে সরকারকে বিশেষভাবে দেখভাল করতে হবে। নিত্যপণ্য তথা ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কার, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার, নির্বাচন কমিশনে আমূল পরিবর্তন আনা এবং সংবিধান সংস্কারসহ নানা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে। সংস্কার হতে হবে অবশ্যই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে। তাড়াহুড়া করে সংস্কার করতে গিয়ে ত্রুটিপূর্ণ সংস্কারও করা যাবে না। আমরা প্রত্যাশিত সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। বিএনপিসহ ছোট বড় রাজনৈতিক দলগুলো চলতি ২০২৫ সনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই সময়ে পরিপূর্ণ সংস্কার হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে। তাই ২০২৫ সনের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার পক্ষে দেশে জনমত তৈরি করা দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশে নির্বাচিত সরকার থাকলে দেশবাসী স্বস্তিবোধ করবে। তখন নানা দেশ আমাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
যেনতেন প্রকারে জাতীয় নির্বাচন আমরা চাই না। দেশবাসী তা মানবেও না। এমন একটা জাতীয় নির্বাচন চাই, যার মাধ্যমে জনমত প্রতিফলিত হবে, জনরায়ে জনগণের সরকার গঠিত হোক তাই আমরা দেখতে চাই। নির্বাচন ব্যবস্থা এমন টেকসই, বাস্তবসম্মত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। যেন নির্বাচনের পর কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে। সবাই যেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সেই নিশ্চয়তা চাই সরকারের কাছে। নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি যেন না হয়, অসাধু কালো টাকার মালিকরা যেন জনপ্রতিনিধি বা এমপি হতে না পারে সেই পথ বন্ধ করে দিতে হবে সরকারকে। নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি আমাদের দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় অন্তরায়।
শত কোটি টাকার বাজেট নিয়ে কালো টাকা ছড়িয়ে এখানে এমপি হওয়া যায়। তাদেরকে কেউ ছুঁতে পারে না। আইন করে নির্বাচন কমিশনকে দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদের নির্বাচনে আসার পথ রুদ্ধ করে দিতে হবে। টাকার জোরে নয় বরং যোগ্যতার জোরে এমপি বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথ তৈরি করে দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এজন্য দরকার অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার করার মাধ্যমে ২০২৫ সনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবিশেষ দাবি জানাই। আশা করি, তাঁরা দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নেবেন।
লেখক: ব্যাংকার, প্রকাশক: প্রথম বসন্ত।
—