প্রথম বসন্ত

আজ  শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি ,৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ 

আজ  শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি ,৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ 

Click Here

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত: চাকরিপ্রার্থীদের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত তরুণ সমাজের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সরকারি চাকরির পরীক্ষা বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস)। প্রতিবারই বিসিএস পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে থাকে ব্যাপক উত্তেজনা ও প্রস্তুতির প্রতিযোগিতা। ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তে প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ২৭ জুন। কিন্তু সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত

বিসিএস

কেন পেছানো হলো পরীক্ষা?

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষাটি নেওয়া সম্ভব নয় বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন করে এই পরীক্ষা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

চাকরিপ্রার্থীদের দাবির ভিত্তিতে এই পরিবর্তন এসেছে। তারা বলেছিলেন, ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার পর ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির মধ্যে যদি কমপক্ষে তিন মাসের ব্যবধান না থাকে, তবে মানসিক ও একাডেমিক প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়বে। এই যৌক্তিক দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে পিএসসি সময়সূচি পুনর্বিন্যাস করেছে।

৪৭তম বিসিএসের তথ্য এক নজরে

  • বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ: ২০২৪ সালের নভেম্বর

  • মোট পদের সংখ্যা: ৩৪৮৭টি ক্যাডার পদ ও ২০১টি নন-ক্যাডার পদ

  • মোট আবেদনকারী: প্রায় ৩.৭৫ লাখ চাকরিপ্রার্থী

  • প্রাথমিক পরীক্ষার প্রস্তাবিত তারিখ: ২৭ জুন → পরিবর্তিত হয়ে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ

বিদ্যমান বিসিএস জটিলতা

বর্তমানে পিএসসির কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে চারটি বিসিএস পরীক্ষা চলমান, যার মধ্যে ৪৪তম, ৪৫তম, ৪৬তম এবং সর্বশেষ ৪৭তম বিসিএস রয়েছে।

  • ৪৪তম বিসিএসের কার্যক্রম প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলছে

  • ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি

  • ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও এখনো বাকি

  • ৪৭তম বিসিএসের প্রস্তুতিপর্ব চলছে

এমন পরিস্থিতিতে পিএসসি চাইছে ভবিষ্যতের বিসিএসগুলো এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ করা হোক। এজন্য তারা একটি বাস্তবভিত্তিক ক্যালেন্ডার তৈরি করছে।

বিসিএস পরীক্ষার সময়সীমা নির্ধারণে নতুন পরিকল্পনা

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—
👉 বিসিএস পরীক্ষা এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে,
👉 পরবর্তী ছয় মাসে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে বিসিএস কার্যক্রমে আনতে হবে গতি, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। তবে ২০২১ সালেও পিএসসি একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল, কিন্তু বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়েছে।

চাকরিপ্রার্থীদের মতামত ও প্রস্তুতির প্রভাব

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পেছানোর খবরে চাকরিপ্রার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন, কারণ এতে তারা আরও সময় পাবেন প্রস্তুতির জন্য। বিশেষ করে যারা চাকরির পাশাপাশি অন্য পরীক্ষাও দিচ্ছেন, তাদের জন্য এটি স্বস্তির খবর।

তবে আবার কেউ কেউ বলছেন, এই ধরনের তারিখ পরিবর্তন ভবিষ্যতের পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করে। তাই তারা চান ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত আগে থেকেই জানানো হোক।

পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ

৪৭তম বিসিএসের সঙ্গে সঙ্গেই আলোচনায় এসেছে পাঠ্যসূচি পরিবর্তনের বিষয়। পিএসসি জানিয়েছে, সময়োপযোগী পাঠ্যসূচি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ডিজিটাল জ্ঞান, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ফলে পরীক্ষার কাঠামোতেও আধুনিকায়ন আনতে যাচ্ছে পিএসসি।

ভবিষ্যতের বিসিএস পরিকল্পনা

বর্তমান পিএসসি চায়—

  • প্রতি বছর নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষা নিতে

  • বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করতে

  • নিয়োগ কার্যক্রম বিলম্ব না করতে

  • চাকরিপ্রার্থীদের জন্য প্রস্তুতি নেবার পর্যাপ্ত সময় নিশ্চিত করতে

এইসব উদ্যোগ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য যেমন সুবিধাজনক হবে, তেমনি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন চাকরিপ্রার্থীদের প্রস্তুতির সময় দিচ্ছে, তেমনি পিএসসির দক্ষ পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।

যদি পিএসসি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে আগামী দিনের বিসিএস পরীক্ষা হতে পারে আরও গতিশীল, স্বচ্ছ এবং কার্যকর। আশা করা যায়, বিসিএস পরীক্ষার এই সংস্কার প্রক্রিয়া দেশের মেধাবী তরুণদের জন্য আরও বড় সুযোগ সৃষ্টি করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *