সিরিয়ায় হামলায় নিহত ৭ শতাধিক বেসামরিক, প্রাণহানি ছাড়াল ১ হাজার
সিরিয়ায় চলমান সংঘর্ষে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে সহিংসতায় ৭০০-রও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, এবং মোট প্রাণহানি সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়েছে।
সিরিয়ায় হামলায় নিহত ৭ শতাধিক বেসামরিক, প্রাণহানি ছাড়াল ১ হাজার
সহিংসতার পটভূমি:
সিরিয়ার উপকূলীয় লাতাকিয়া ও তারতুস প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগতদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হয়েছে। এই সংঘর্ষে আলাউইত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেসামরিক লোকজন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার আলাউইতদের লক্ষ্য করে প্রায় ৩০টি গণহত্যায় ৭৪৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।
আলাউইত সম্প্রদায়ের বিপর্যয়:
আলাউইতরা সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নিজস্ব সম্প্রদায়। বর্তমান সহিংসতায় এই সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। লাতাকিয়ার হামেইমিমে একটি রুশ সামরিক ঘাঁটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, কয়েক ডজন পরিবার প্রতিবেশী লেবাননে পালিয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন উপকূলীয় অঞ্চলে বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সকল পক্ষকে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিপন্ন করতে পারে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন:
মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে, সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও তাদের মিত্ররা বেসামরিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে এবং চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। এসব হামলায় শিশু ও মহিলারাও নিহত হচ্ছেন, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সাম্প্রতিক রুশ হামলা:
এর আগে, ২০১৯ সালে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রুশ নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানে ৫০০-রও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, ওই অভিযানে ১৩০ জন শিশুসহ ৫৪৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ২,১১৭ জন আহত হয়েছিলেন।
মানবিক সংকট:
চলমান সহিংসতায় সিরিয়ায় মানবিক সংকট তীব্রতর হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন, যা শরণার্থী সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার অভাবে তারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা:
সিরিয়ার এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সহিংসতা বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বৃদ্ধি, মানবিক সহায়তা প্রদান এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক আদালতের সহযোগিতা প্রয়োজন।
সিরিয়ায় চলমান সহিংসতা ও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।