সিরিয়ায় সরকারি সেনা ও আসাদপন্থি যোদ্ধাদের সংঘর্ষ, নিহত ৭০
সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত যোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। এই সহিংসতা গত ডিসেম্বরে আসাদ সরকারের পতনের পর সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সিরিয়ায় সরকারি সেনা ও আসাদপন্থি যোদ্ধাদের সংঘর্ষ, নিহত ৭০
সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে লাতাকিয়া প্রদেশের জাবলেহ শহরের কাছে, যেখানে সরকারি বাহিনী একটি নিরাপত্তা অভিযানের সময় আসাদপন্থি যোদ্ধাদের হামলার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি শুরু হয়, যা দ্রুত উপকূলীয় অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে কিছু এলাকায় ভারী অস্ত্রের গুলিবর্ষণের দৃশ্য দেখা গেছে।
ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩৫ জন সরকারি বাহিনীর সদস্য, ৩২ জন আসাদপন্থি যোদ্ধা এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এসওএইচআর আরও জানায়, আসাদপন্থি সশস্ত্র যোদ্ধারা উপকূলীয় এলাকায় সামরিক বাহিনী, চেকপোস্ট ও সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে এবং লাতাকিয়া পর্বতমালার কিছু এলাকা দখল করে সেখান থেকে হামলা পরিচালনা করছে।
সংঘর্ষের জেরে বন্দরনগরী লাতাকিয়া ও তারতুসে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সরকারি বাহিনী জাবলেহ ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রায় ৭০ জন আসাদপন্থি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং ২৫ জনকে আটক করেছে। হোমস ও আলেপ্পো শহরেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে হোমসের আবাসিক এলাকায় ভারী অস্ত্রের গুলির আওয়াজ শোনা গেছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আবদুল গনি রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার মাধ্যমে লাতাকিয়ায় যুদ্ধরত আসাদপন্থিদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘হাজার হাজার মানুষ অস্ত্র ফেলে পরিবারের কাছে ফিরে গেছে। কিন্তু কিছু লোক এখনও হত্যাকারী ও অপরাধীদের রক্ষায় লড়াই করে মরতে চাইছে। তোমাদের সামনে স্পষ্ট পথ রয়েছে—অস্ত্র ফেলে দাও অথবা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করো।’
এই সংঘর্ষ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আলাউয়ি কর্মীরা বলছেন, আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তাদের সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও সহিংসতা বেড়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ হোমস ও লাতাকিয়ায়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে দ্রুজ সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে সরকারি বাহিনী।
এর আগে এই সপ্তাহে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বের রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষক সংস্থাকে জানান, নতুন সরকার আসাদ শাসনামলে উৎপাদিত অবশিষ্ট রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় আসাদ সরকার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করলেও কর্মীরা তাদের কয়েক ডজন রাসায়নিক হামলার কথা বলেছেন।
সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। দেশটির নতুন সরকারকে এখন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।