সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক, এরদোয়ানের পদত্যাগ দাবি
তুরস্ক বর্তমানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল, যেখানে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবি জোরালোভাবে উঠেছে। এই বিক্ষোভের সূত্রপাত ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামোলুকে গ্রেফতারের পর থেকে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বিক্ষোভের পটভূমি
১৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ইমামোলুকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় বিরোধী নেতা এবং ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। তার গ্রেফতারের পরপরই ইস্তানবুলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভের বিস্তার ও সরকারী প্রতিক্রিয়া
বিক্ষোভ দমনে প্রশাসন ইস্তানবুলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ করে দেয় এবং পাঁচ দিনের জন্য জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করে। তবে, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পেপার স্প্রে, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। আঙ্কারা ও ইজমির শহরেও একই ধরনের বিক্ষোভ ও পুলিশের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অর্থনৈতিক সংকট ও যুবসমাজের হতাশা
সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের অর্থনীতি অবনতির দিকে যাচ্ছে, যা নাগরিকদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের দুই-তৃতীয়াংশ সুযোগ পেলে দেশ ছাড়তে চান। এই অর্থনৈতিক সংকট বিক্ষোভের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে দমননীতি
২০২৮ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনা সমালোচকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইমামোলুর গ্রেফতারের পাশাপাশি আরও শতাধিক রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই ধরপাকড়ের উদ্দেশ্য বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করা।
এরদোয়ানের প্রতিক্রিয়া ও হুঁশিয়ারি
বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় এরদোয়ান কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “রাস্তার সন্ত্রাস কিংবা বিক্ষোভকারীদের কাছে তার সরকার আত্মসমর্পণ করবে না। জনশৃঙ্খলা ব্যাহত হয়, এমন কিছু মেনে নেওয়া হবে না।” তিনি বিরোধীদের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগও করেছেন।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক, এরদোয়ানের পদত্যাগ দাবি। বর্তমান বিক্ষোভ তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিরোধী দলগুলো ইমামোলুর গ্রেফতারকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছে এবং এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে দেশ-বিদেশের নজর তুরস্কের ওপর রয়েছে।