বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে আগ্রহী কমনওয়েলথ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের প্রক্রিয়াকে ঘিরে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পৌঁছেছে দেশের রাজনীতি। এই প্রেক্ষাপটে কমনওয়েলথের আগ্রহ নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ইতিবাচক বার্তা বহন করে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে সৌজন্য সাক্ষাতে কমনওয়েলথের মহাসচিব শার্লি আয়র্কর বটচওয়ে এই আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে আগ্রহী কমনওয়েলথ
এই আগ্রহ কেবল রাজনৈতিক সংস্কারে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন, যুব উন্নয়ন, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাকেও অন্তর্ভুক্ত করছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে রয়েছে। এই সময়কে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের নজর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ড রক্ষার দিকে।
কমনওয়েলথ, যার সদস্য ৫৬টি রাষ্ট্র এবং প্রায় ২.৭ বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা বাংলাদেশকে এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় নানাভাবে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। বিশেষ করে সংবিধান সংস্কারে তারা প্রযুক্তিগত, আইনি এবং প্রশাসনিক সহায়তা দিতে চায়।
গণতন্ত্রের বিকাশ
সাংবিধানিক সংস্কার একটি দেশের গণতন্ত্রের মূল ভিত গঠনে সহায়ক।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিরসন
বিদেশি তত্ত্বাবধান অনেক সময় দলগুলোর আস্থার সংকট দূর করে।
বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে আগ্রহী কমনওয়েলথ। কমনওয়েলথ আগামী পাঁচ বছরের জন্য যে নীতিগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে, তার মধ্যে আছে:
-
গণতন্ত্র ও সুশাসন জোরদার
-
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা
-
যুব উন্নয়ন
-
অর্থনৈতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ
বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে আগ্রহী কমনওয়েলথ। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ, বিশেষত বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করে একটি স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার।
শার্লি আয়র্কর বটচওয়ে বলেন,
“বাংলাদেশ চাইলে আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কারে। গণতন্ত্র ও সুশাসন এখন আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।”
এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে আগ্রহী এবং তারা উন্নয়নের অংশীদার হতে চায়।
কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বছরে ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়। ভবিষ্যতে এটিকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ যদি এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, তাহলে রপ্তানি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান খাতে বড় ধরনের অগ্রগতি আসবে।
বাংলাদেশ একটি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
কমনওয়েলথ জানিয়েছে, তারা ছোট ও দুর্বল দেশগুলোকে জলবায়ু অর্থায়নে সহায়তা দেবে। জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো গঠনে এই সহায়তা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
ড. ইউনূস কমনওয়েলথ মহাসচিবকে খেলাধুলায় যুবদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন,
“খেলাধুলা শুধু বিনোদন নয়, এটি সামাজিক দিকনির্দেশনার একটি মাধ্যম।”
কমনওয়েলথও এর সাথে একমত হয়ে জানিয়েছে, তারা এই মাসেই ঢাকায় একটি যুব কর্মসূচি আয়োজন করবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য আবারও Commonwealth Scholarship চালু করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন মহাসচিব। এটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ।
সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন:
-
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান
-
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী
-
এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ
-
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম
এই উচ্চপর্যায়ের উপস্থিতি এ বৈঠকের গুরুত্ব বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে আগ্রহী কমনওয়েলথ। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কমনওয়েলথের এই সহায়তার ইচ্ছা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। যদি বাংলাদেশ সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে।
আশা করা যায়, কমনওয়েলথের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে উঠবে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনবে।