বন্দরের কনটেইনারে চারগুণ মাশুল, ক্ষতির মুখে পড়তে পারে রপ্তানি খাত
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কনটেইনার জট কমাতে স্টোর রেন্ট বা মাশুল চারগুণ বৃদ্ধি করেছে, যা দেশের রপ্তানি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে পোশাকশিল্পসহ কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল রপ্তানি খাত এই মাশুল বৃদ্ধির ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
মাশুল বৃদ্ধির কারণ:
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত চার দিনের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি না নিলে অতিরিক্ত মাশুল দিতে হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১০ মার্চ ২০২৫ থেকে ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য প্রথম সাত দিন প্রতিদিন ২৪ ডলার, দ্বিতীয় ১৩ দিন প্রতিদিন ৯৬ ডলার এবং তৃতীয় ২১ দিন প্রতিদিন ১৯২ ডলার মাশুল ধার্য করা হয়েছে। ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য এই মাশুল যথাক্রমে ৪৮ ডলার, ১৯২ ডলার এবং ৩৮৪ ডলার। এর ফলে আমদানিকারকদের একেকটি কনটেইনারের জন্য সর্বোচ্চ ৩৮৪ ডলার পর্যন্ত মাশুল দিতে হতে পারে, যা শিল্প খাতের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে।
রপ্তানি খাতে প্রভাব:
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা এই মাশুল বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের নেতারা বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই মাশুল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, গত সাত মাসে শ্রমিক আন্দোলন, গ্যাস সংকট এবং বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে পোশাকশিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অনেক কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন এই মাশুল আরোপ শিল্পের সংকটকে আরও তীব্র করবে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ৫৮০টি রপ্তানিকারক পোশাক কারখানার মধ্যে ৫২৮টি চালু রয়েছে এবং ৫০টির বেশি বন্ধ হয়ে গেছে। পোশাকশিল্প দেশের জিডিপিতে ১০ শতাংশ অবদান রাখে, যা ক্ষতির মুখে পড়লে জাতীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিকল্প সমাধানের প্রয়োজনীয়তা:
বন্দর কর্তৃপক্ষের এই মাশুল বৃদ্ধির পদক্ষেপ কনটেইনার জট কমানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হলেও, এটি রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, কনটেইনার জট কমাতে এবং রপ্তানি খাতকে সুরক্ষিত রাখতে বিকল্প সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন, বন্দরের কার্যক্রমে স্বয়ংক্রিয়তা বৃদ্ধি, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, অফ-ডক সুবিধা বাড়ানো এবং লজিস্টিক অবকাঠামো উন্নয়ন করা যেতে পারে। এতে করে কনটেইনার খালাসের সময় কমবে এবং মাশুল বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারে চারগুণ মাশুল বৃদ্ধি রপ্তানি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে পোশাকশিল্পের মতো কাঁচামাল আমদানিনির্ভর খাতগুলোতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে। তাই, কনটেইনার জট কমাতে এবং রপ্তানি খাতকে সুরক্ষিত রাখতে বিকল্প সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।