
পূবালী ব্যাংকের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু
বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি শক্তিশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে লুটপাট ও অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে আর্থিক সংকটে ফেলার অভিযোগে জড়িত। তদন্তের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিগগিরই নোটিশ পাঠানো হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) পৃথকভাবে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণে অনিয়ম, ডলার কারসাজি, অর্থ পাচার, নিয়োগ দুর্নীতি এবং বন্ধকী সম্পত্তি কম দামে বিক্রির মতো নানা দুর্নীতির তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তের গতি শ্লথ করতে নানা অপচেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের বিস্তারিত
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ব্যাংকের একটি চক্র ডলার কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করে। বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার কিনে ২১১ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের শত শত কোটি টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে না দিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণও পাওয়া গেছে।
এছাড়া, ব্যাংকের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমানের বিরুদ্ধে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ২৫ লাখ গ্রাহকের ১,১৪১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যা পূবালী ব্যাংকের অন্যতম অংশীদার, সেই প্রতিষ্ঠানেও তিনি তার চার সন্তানকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতিতে যুক্ত হন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ২,৯০০ কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য তিনি ডাটাবেজের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলেন।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধেও বিশদ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে ১০ জন পরিচালককে অপসারণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
তদন্তের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম জানান, “এই বিষয়ে আমার কাছে এখনো কোনো তথ্য আসেনি, তবে তদন্ত চলমান রয়েছে।”
এদিকে, দুদকের উপপরিচালক মো. আখতার হোসেন বলেন, “অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে এবং তদন্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।”
তবে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই তদন্তের মাধ্যমে পূবালী ব্যাংকের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির গভীরতা উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।