
তিন দিনের আলোচনায় অর্জন কী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছিল ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫-তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে
এই কমিশন ৩৩ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫ সেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর ১৭–১৯ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল দ্বিতীয় পর্যায়ের তিন দিনের সংলাপ, যেখানে আলোচিত বিষয় ছিল সংবিধান অনুচ্ছেদ ৭০, নারী ও কমিটি নেতৃত্ব, দ্বিকক্ষ সংসদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ, এনসিসি গঠন ও বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে প্রাথমিক কর্মসূত্র
তিন দিনের আলোচনায় অর্জন কী
প্রথম দিন (১৭ জুন): ৭০ অনুচ্ছেদ ও নারী আসন
৭০ অনুচ্ছেদ — ‘আস্থা ভোট’ ও ‘অর্থ বিল’-এর বাইরে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে, MPs পদ হারাবে না—এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক একমত
তবে যুদ্ধকালীন ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে বিএনপি আলাদা অবস্থান নেয়।
স্থায়ী কমিটি চেয়ারম্যান — পাবলিক অ্যাকাউন্টস, প্রিভিলেজ, ইস্টিমেশন ও পাবলিক আন্ডারটেকিংয়ের সভাপতি বিরোধীদলের—এ বিষয়ে ঐকম্য হয়েছে, তবে এনসিপি আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়েও এই সুযোগ চেয়েছে
নারী প্রতিনিধিত্ব — সরাসরি ভোট ও সংরক্ষিত আসন নিয়ে বেশিরভাগ দল সমর্থন করেছে, তবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে; ধর্মীয় দল দ্বিমত প্রকাশ করেছে
NCP‑র পক্ষ থেকে “আলোচনায় সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব নেই” অভিযোগ উত্থাপিত হয়, যা অনানুষ্ঠানিক উদ্বেগ সৃষ্টি করে
দ্বিতীয় দিন (১৮ জুন): এনসিসি গঠন ও নিরপেক্ষতা প্রশ্ন
তিন দিনের আলোচনায় অর্জন কী। এনসিসি প্রস্তাব — রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, উভয় কক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও আসনবিন্যাস নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অঙ্গীকারের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ অংশিদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠনের প্রস্তাব। জামায়াত, এনসিপি সহ কিছু দল এ প্রস্তাব সমর্থন করেছে, তবে বিএনপি ও গণফোরাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে
নিরপেক্ষতা অভিযোগ — এনসিসি নিয়ে এনসিপি হতাশা প্রকাশ করেছে, বিএনপি প্রস্তাবিত দায়িত্ব কাঠামোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ।
জামায়াতের সময়প্রাধান্য — গণফোরাম, সিপিবি ও এলডিপি অভিযোগ করে জামায়াত বেশি সময় পেয়েছে। একপর্যায়ে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে পরে তারা বৈঠকে ফিরে আসে।
তৃতীয় দিন (১৯ জুন): রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি — ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি (স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিসহ) প্রস্তাব করা হলেও কিছু দল এই পদ্ধতির প্রতি প্রশ্ন তুলেছে। দ্বিকক্ষ সংসদ গঠনের আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রয়োজনের বিষয়ে সম্মতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ বিতর্ক — বেশিরভাগ দল একে দুই মেয়াদের সীমায় আনতে চেয়েছে, তবে বিএনপি বিরতির পর পুনরায় পার হতে পারে—এই বিধানটির পক্ষে। এনসিপি অধিক সময়ের বিরতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে একে সমর্থন করেছে ।
চূড়ান্ত ঐক্য ছাড়া আলোচনা অব্যাহত — ABI পার্টির মঞ্জু জাতীয় ঐক্য না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন; তবে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলছেন, আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে আলোচনার পরিবেশ এখনও সুষ্ঠ।
৭০ অনুচ্ছেদ ও সংসদ সদস্যদের স্বাধীন ভোটে ঐক্যমত গঠন
স্থায়ী সংসদীয় কমিটিগুলোতে বিরোধীদলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত
নারী-নির্বাচন ও সংরক্ষিত আসনে বিপুল সমর্থন
দ্বিকক্ষ সংসদ সম্পর্কে সম্মতি, পদ্ধতি নির্ধারণ ও পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ হয়েছে
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন—পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়নি
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ—বিভিন্ন দলে মতবৈষম্য
এনসিসি গঠন—নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতার বিষয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিভক্ত
দ্বিকক্ষ সংসদ—গঠনবিধি নির্ধারণের ক্ষেত্রে দ্বিমত রয়েছে
কমিশনের উপর “পক্ষপাতিত্ব” ও “সুনির্দিষ্ট দল-পছন্দ” অভিযোগে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিন দিনের আলোচনায় অর্জন কী। স্থানীয় সরকারকেও সংযুক্ত করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন:
ইলেকটোরাল কলেজ সম্প্রসারণ ও নির্বাচন-অভিনীতায় এ সমস্যা সমাধানে ধরা প্রার্থনা।
মেয়াদ ও বিরতি নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট বিধান:
বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রস্তাব নিয়ে সম্মিলিত আলোচনা প্রয়োজন।
এনসিসির স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো স্থাপনে সংলাপ অব্যাহত:
জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করতে যোগ্য পদক্ষেপ প্রয়োজন।
জুলাই সনদ চূড়ান্ত করণ:
সংলাপের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ—এই সেপ্টেম্বরের মধ্য কোন রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হবে।
মিডিয়া ও জনমত টেনে নিয়ে সাহায্য:
বৈঠকপ্রসার ও পৌরায়নসংক্রান্ত রিপোর্ট করে জন সমর্থন গড়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করা যেতে পারে।
তিন দিনের আলোচনায় অর্জন কী। তিন দিনের সংলাপে প্রাথমিক পুরস্কার হিসেবে পাওয়া গেছে সংসদীয় স্বাধীনতা, নারী-নির্বাচন ও কমিটি নেতৃত্বে বিরোধীদলের অংশগ্রহণ। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ-সীমা সমস্যা এখনও বিস্তৃত আলোচনার অপেক্ষায়। এনসিসি–র গঠন ও জাতীয় গ্রহণযোগ্যতা বিষয়েও দৃঢ় ঐক্য হয়নি। তবে কমিশনের সৌহার্দ্যমূলক আচরণ, অংশগ্রহণকারীদের মত বিনিময় এবং ‘জুলাই সনদ’ তৈরির সিদ্ধান্ত—এই পরিকল্পনা প্রস্তাবটি ইতিবাচক সূচনার দিক দেখাচ্ছে।