বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতির আলোকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পারমাণবিক ইস্যু বরাবরই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির পর এবং ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সরে যাওয়ার পর এই ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সম্প্রতি, আবারো আলোচনার টেবিলে বসতে চলেছে দুই পক্ষ, তবে এবার স্থান ওমান। ফোকাস কিওয়ার্ড “ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আলোচনা ওমানে” ঘিরে এই কনটেন্টে আমরা বিশ্লেষণ করবো আলোচনার প্রেক্ষাপট, মূল বিষয়বস্তু, সম্ভাব্য ফলাফল এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া।
আলোচনার প্রেক্ষাপট
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি—Joint Comprehensive Plan of Action (JCPOA)। এর মাধ্যমে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়, যার বদলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে সরে আসেন এবং পুনরায় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর থেকে এই ইস্যুতে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
কেন ওমানে আলোচনা?
ওমান মধ্যপ্রাচ্যে একটি নিরপেক্ষ এবং শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে পরিচিত। পূর্বেও ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে ওমান। এবারের আলোচনায় ওমান আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অংশগ্রহণকারী প্রধান ব্যক্তিরা:
-
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘছি
-
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ
-
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আলবুসাইদি
আলোচনার মূল বিষয়বস্তু
-
পরমাণু কর্মসূচি সীমিতকরণ
-
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
-
২০১৫ সালের চুক্তি পুনঃবাস্তবায়ন
-
আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ
-
তেল রপ্তানি ও বাণিজ্য বিষয়ক শিথিলতা
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
-
চীন: যুক্তরাষ্ট্রকে রাজনৈতিক আন্তরিকতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
-
ইসরায়েল: আলোচনায় স্পষ্টভাবে দ্বিমত জানিয়েছে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলেছে।
-
ইইউ (EU): আলোচনা শুরু হওয়ায় স্বাগত জানিয়েছে এবং কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি আলোচনার ঘোষণা দিলেও ইরান তাকে ‘মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগকারী’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে হোয়াইট হাউজ সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্প আলোচনায় অগ্রগামী ভূমিকা রাখতে চান এবং ইরান চুক্তিতে না এলে কঠোর প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছেন।
ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি
ইরান সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, আলোচনা হতে পারে কেবল পূর্বের চুক্তির ভিত্তিতে এবং তারা আলোচনায় কোনও অন্তর্বর্তী চুক্তির পক্ষে নয়।
আলোচনার সম্ভাব্য ফলাফল
-
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
-
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমে আসা
-
তেলবাজারে স্থিতিশীলতা
-
চুক্তির পুনঃসাক্ষর অথবা নতুন কাঠামোতে চুক্তি
ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আলোচনা ওমানে অনুষ্ঠিত হওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক শান্তি, কূটনীতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ওমানের মতো নিরপেক্ষ দেশের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আলোচনার সফলতা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের আন্তরিকতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং বাস্তবসম্মত কৌশলের ওপর।