ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এ দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের শক্তিশালী পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ইংল্যান্ডকে সাত উইকেটে পরাজিত করে সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। এই জয়ে প্রোটিয়ারা গ্রুপ বি-এর শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে, যেখানে ইংল্যান্ড তাদের তৃতীয় পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে।
ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বিপর্যয়:
করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টস জিতে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তাদের ইনিংসটি শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায়। প্রথম ওভারে ফিল সল্ট মাত্র ৮ রান করে আউট হন, এরপর জেমি স্মিথও শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। জো রুট এবং বেন ডাকেট কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে তারা বড় জুটি গড়তে ব্যর্থ হন। রুট সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন, কিন্তু দলের অন্য ব্যাটসম্যানরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেননি। ফলে, ৩৮.২ ওভারে ইংল্যান্ড মাত্র ১৭৯ রানে অলআউট হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং দাপট:
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে সমর্থ হন। মার্কো জানসেন এবং উইয়ান মুল্ডার উভয়েই ৩টি করে উইকেট নেন, যেখানে মুল্ডার মাত্র ২৫ রানে তার ৩ উইকেট শিকার করেন। তাদের সুনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফলে ইংল্যান্ড বড় স্কোর গড়তে ব্যর্থ হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার সহজ জয়:
১৮০ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাও শুরুতে কিছুটা চাপে পড়ে। ওপেনার ট্রিস্টান স্টাবস শূন্য রানে আউট হন। তবে রায়ান রিকেলটন এবং রাসি ভ্যান ডার ডুসেন মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ৪৫ রানের জুটি গড়েন। রিকেলটন ২৭ রান করে আউট হলেও, ভ্যান ডার ডুসেন এবং হেইনরিখ ক্লাসেন মিলে তৃতীয় উইকেটে ১২৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ক্লাসেন ৬৪ রান করে আউট হন, আর ভ্যান ডার ডুসেন ৭২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
ইংল্যান্ডের হতাশাজনক পারফরম্যান্স:
এই টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। তারা গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচের একটিতেও জয় লাভ করতে পারেনি, যা তাদের সাদা বলের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্সগুলির একটি। অধিনায়ক জস বাটলারের নেতৃত্বে দলটি ব্যাটিং ও বোলিং উভয় বিভাগেই ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে, ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা এবং বোলারদের সঠিক লাইন ও লেংথে বল করতে না পারা তাদের পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল প্রতিপক্ষ:
গ্রুপ বি-এর শীর্ষে থেকে সেমিফাইনালে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের প্রতিপক্ষ হবে গ্রুপ এ-এর দ্বিতীয় স্থানধারী দল, যা হতে পারে ভারত বা নিউজিল্যান্ড। রবিবার দুবাইয়ে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ম্যাচের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সেমিফাইনালের সূচি নির্ধারিত হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ফাইনালে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদী।
ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
এই টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার পর ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) সাদা বলের ক্রিকেটে তাদের কৌশল ও দলগঠনে পরিবর্তন আনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে। অধিনায়ক জস বাটলারের পদত্যাগের পর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন এবং দলকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। তাদের ব্যাটিং লাইনআপে স্থিতিশীলতা এবং বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র্য আনার জন্য নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করতে হবে।
সেমিফাইনালের প্রতীক্ষা:
দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ নির্ধারিত হবে রবিবারের ম্যাচের পর। তারা তাদের ফর্ম বজায় রেখে ফাইনালে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড তাদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার প্রত্যাশা করছে।