প্রথম বসন্ত

আজ  রবিবার ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি ,২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ 

আজ  রবিবার ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি ,২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ 

Click Here

গাজায় আপাতত ত্রাণ যাবে না : ইসরায়েলের সেনাবাহিনী


গাজায় আপাতত ত্রাণ যাবে না : ইসরায়েলের সেনাবাহিনী

বর্তমানে গাজা উপত্যকায় সংঘাত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চলমান অভিযান এবং অবরোধের কারণে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে স্থগিত করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাতে জানানো হয়েছে, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।” এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

গাজা উপত্যকার বর্তমান মানবিক পরিস্থিতি

গাজায় আপাতত ত্রাণ যাবে না : ইসরায়েলের সেনাবাহিনীগাজা বর্তমানে মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। দীর্ঘদিনের অবরোধ, বিদ্যুৎ এবং পানির সংকট, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব—সব মিলিয়ে সাধারণ জনগণের জীবন চরম অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত। যুদ্ধের ধাক্কায় হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। খাদ্যসংকট এতটাই তীব্র যে, বহু মানুষ দিনে একবেলা খাবারও পাচ্ছে না।

বিশেষ করে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি শোচনীয়। জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজাকে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ত্রাণ স্থগিতের ঘোষণার পেছনের কারণ

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, “গাজায় প্রবেশ করা ত্রাণগুলো হামাসের হাতে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।” তাদের দাবি, এই সাহায্যগুলো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হামাস নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবে সাধারণ মানুষের উপর এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মানবিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি এবং বিভিন্ন এনজিও সংগঠন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, “মানবিক সহায়তা কোনো পক্ষের নয়—এটি মানুষের অধিকার।” তিনি গাজার জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে অবিলম্বে ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা একে যুদ্ধাপরাধের সামিল বলে উল্লেখ করেছে।

অতীতেও দেখা গেছে একই ধারা

গাজায় আপাতত ত্রাণ যাবে না : ইসরায়েলের সেনাবাহিনীগাজায় পূর্বে সংঘটিত সংঘাতে বারবার দেখা গেছে ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। ২০২১ সালের সংঘাতে একাধিকবার খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। ওই বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।

জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল।

বিরতির আগ পর্যন্ত গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো জরুরি ত্রানের সরবরাহ অনিয়মিত হলেও মোটামুটি মাত্রায় পৌঁছেছে। ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির পর ১৭ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২ মাসে প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দিয়েছে ইসরায়েল। এই বারবার বন্ধ করার ধারায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল যা এবারও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ সরকার গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং ত্রাণ স্থগিতের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “নিরীহ মানুষের প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুরতা মানবতা বিরোধী।” বাংলাদেশ জাতিসংঘে এই বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছে এবং অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

মিডিয়ার ভূমিকা

গাজায় সাংবাদিকদের প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। যেসব সাংবাদিক সেখানে রয়েছেন, তাদের কাজেও রয়েছে বাধা। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর মতে, “গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে সত্য তুলে ধরা প্রয়োজন, যাতে বিশ্ববাসী বাস্তবতা বুঝতে পারে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে—# ইসরায়েল গাজা সংঘাত#FreeGaza, #StopTheBlockade, #HumanityFirst। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিখ্যাত ব্যক্তিরাও গাজার মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন।

কি হতে পারে ভবিষ্যত?

পরিস্থিতি যদি এমনই চলতে থাকে, তাহলে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে যে, পরিষ্কার পানি এবং ওষুধের ঘাটতির কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়।

ইসরায়েল যদি ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেই সামরিক অভিযান চালিয়ে যায়, তাহলে গাজায় এক ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হতে পারে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে একাধিক বিশ্লেষক।

সমাধানের পথ কোথায়?

গাজা সংকট নিরসনের একমাত্র উপায় হলো যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক করিডোর চালু করা। এটি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। জাতিসংঘ, আরব লীগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর উচিত সরাসরি মধ্যস্থতা করে যুদ্ধ থামিয়ে মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করা।

গাজায় আপাতত ত্রাণ যাবে না : ইসরায়েলের সেনাবাহিনীগাজা বর্তমানে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট মোকাবিলা করছে। ইসরায়েলের ‘ত্রাণ বন্ধ’ নীতির কারণে লাখো নিরীহ মানুষ ক্ষুধা, রোগ এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই সংকটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষভাবে মানবতার পাশে দাঁড়ানো। যুদ্ধ নয়, দরকার শান্তি; আগ্রাসন নয়, দরকার মানবিকতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *